সব
নগরীর বন্দরবাজারস্থ বিআরটিএ ভবনের ৩য় তলার ৩১০ নম্বর কক্ষে বসেন সানাউল্লাহ ফকির। তিনি টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সিলেট সার্কেলের ইনচার্জ। বিআরটিএ সিলেট অফিস থেকে প্রদত্ত যানবাহনের ডিজিটাল নম্বর প্লেট এবং ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ডিআরসি) বা ‘ডিজিটাল ব্লু-বুক’ জালিয়াতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত সানাউল্লাহ ফকির। তার কেরামতিতে এক গাড়ির নম্বর প্লেট বসে যায় অন্য গাড়িতে। পাশাপাশি নগদ উৎকোঁচের বিনিময়ে তিনি যে কারো হাতে তুলে দেন ডিজিটাল ব্লু-বুক।
জানা গেছে, বর্তমানে নতুন করে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে না বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। কিন্তু পুরোনো গাড়িগুলোতে ডিআরসি এবং ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রদান করা হচ্ছে এখনো। সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বিআরটিএ ভবন থেকে যানবাহনের ডিআরসি এবং ডিজিটাল নম্বর প্লেট সংগ্রহ করেন সিলেটের সিএনজি অটোরিকশা মালিকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের অনেক সিএনজি অটোরিকশা মালিক নিজেদের গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। কোনো কোনো গাড়ি দুই থেকে তিন মালিকের হাত বদল হয়েছে। অনেক গাড়ি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। প্রকৃত মালিকেরা যোগাযোগ না করায় ওই গাড়িগুলোর ডিআরসি ও ডিজিটাল নম্বর প্লেট তৈরি হয়ে আছে বিআরটিএ সিলেট অফিসে। অনেকক্ষেত্রে সিএনজি অটোরিকশার মালিককে ভুল বুঝানো হয় বিআরটিএ অফিস থেকে। তাদের বলা হয়, এলনো ডিআরসি এবং নম্বরপ্লেট আসে নি। নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্রদান বন্ধ থাকলেও বন্ধ হয়নি নতুন সিএনজি অটোরিকশা বিক্রি। প্রতিনিয়তই সড়কে নামছে গাড়িগুলো।
বিআরটিএ সিলেট অফিসে কর্মকত টাইগার আইটির সিলেট সার্কেলের ইনচার্জ সানাউল্লাহ ফকিরের যোগসাজোসে নতুন গাড়িতে বসছে পুরোনো নম্বরপ্লেট। ওয়ার্কশপে চেসিস নম্বর বদলে পুরোনো গাড়ির নম্বর বসিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে। নতুন গাড়ির মালিক পেয়ে যান ডিজিটাল ব্লু-ব্লুক বা ডিআরসি। ডিআরসি বা ডিজিটাল নম্বর প্লেট নিতে হলে গাড়ির মূল মালিককে বিআরটিএ অফিসে নিজের ছবি ও (বায়োমেট্রিক) ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে গাড়ির ছবি তুলতে হয়। কিন্তু সিলেটে একাধিক গাড়ি রয়েছে যেগুলো একই নম্বর প্লেটে চলছে এবং চেসিস নম্বরও একই। প্রকৃত মালিকের ছবি না নিয়ে হাজার টাকার বিনিময়ে অন্য ব্যক্তির হাতে ডিআরসি তুলে দেন সানাউল্লাহ ফকির।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৫ সালে রেজিস্ট্রেশনকৃত সিলেট-থ-১১-৭৪১৫ নম্বরের একটি সিএনজি অটোরিকশার প্রকৃত মালিক গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণের মিশরপাড়া এলাকার মহরম আলীর ছেলে মো. খছরু মিয়া। কিন্তু সম্প্রতি নতুন একটি সিএনজি অটোরিকশায় খছরু মিয়ার নামের ডিআরসি এবং ডিজিটাল নম্বরপ্লেট প্রদান করেছেন সানাউল্লাহ ফকির। বিআরটিএর’র সার্ভারে নেই খছরু মিয়ার ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিংবা ছবি। নগরীর নবাব রোড এলাকার তোফাজ্জল আলীর ছেলে আব্দুল ওয়াদুুদের নামীয় ২০০২ সালের রেজিস্ট্রেশনকৃত সিলেট-থ-১১-৩২০৬ নম্বরের গাড়ির ডিআরসি এবং নম্বর প্লেট প্রদান করা হয়েছে নতুন একটি গাড়িতে। অনলাইনে নেই আব্দুল ওয়াদুদের তথ্য। একইভাবে সিলেট-থ-১১-২৬০১, সিলেট-থ-১১-৩৬৪১, সিলেট-থ-১১-৭৪১৫, সিলেট-থ-১১-২৩০৬ সহ বহু গাড়ির নম্বর প্লেট এবং ডিআরসি টাকার বিনিময়ে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছেন সানাউল্লাহ ফকির।
এ ব্যাপারে সানাউল্লাহ ফকিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল দায়ভার বিআরটিএ সিলেট অফিসের সহকারী পরিচালকের উপর দিয়ে বলেন, আমি এডি স্যারের লিখিত নির্দেশে আমরা পাঞ্চ করা চেসিসে ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগিয়ে দেই।
বিআরটিএ সিলেট অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) সানাউল হক জানান, অসম্ভব। এটা হতেই পারে না। আমি কখনো এরকম কোনো নির্দেশ দেই নি।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি