সব
বঙ্গবন্ধু কন্যা হারালেন তার এক বিশ্বস্ত যোদ্ধাকে । সাংবদিকতার শুরুর দিকেই কাছ থেকে দেখা এডভোকেট সাহারা খাতুনকে। এর আগে আমি উনাকে দেখেছি টিভিতে ।
আমার সাংবাদিকতা শুরু বিএনপি-জামাতের আমলে । তখন মাঠে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা । হরতাল, অবরোধের নিউজ কাভার করতাম দেখতাম সাহারা খাতুনের দলের প্রতি ও তার নেত্রীর প্রতি ভালবাসা ডেডিকেটেড । অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করা তার কাছে কিছুই না দলের জন্য তিনি সারা জীবন সঙ্গীবিহীন কাটিয়ে দিলেন । তাতেও তার কোন দু:খ, কষ্ট ছিলনা ।
একদিন হরতাল শেষে সুধা সদনে কথা বলছিলেন আপা( বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ) ঐ দিন হরতালে মার খেয়েছিলেন সাহারা আপা, মতিয়া আপা, নাসিম ভাইসহ অনেকই । তখন আপা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি । চোখ মুছতে মুছতে বলছিলেন, এরশাদ সরকারের সময় যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন, সেই সময় সাথে সাহারা আপাও মতিয়া আপাও ছিলেন । বন্দি খানায় যে খাবার দেয়া হতো সেই ভাতে থাকতো প্রচুর কাকর । আপা খেতেই পারতেন না । মতিয়া আপা ও সাহারা আপা দু’জন সেই ভাত ডাল দিয়ে চটকিয়ে উপরের পানিটা আপাকে দিতেন । সেই পানি খেয়েই আপা বন্দি সময়ে পার করেছেন ।
বঙ্গবন্ধু কন্যার এমন দু:সময়ে আগলে রেখেছিলেন সাহারা আপা, মতিয়া আপারা । ওয়ান ইলেভেনের সময়ে নেত্রীর মুক্তির জন্য আইনজীবী প্যানেলে সরব দেখেছি । অনেকেই ছিলেন সেখানে- সাবেক মন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, বর্তমান স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীসহ অনেকে । সব সময়ই দেখেছি উদ্বেগ উৎকন্ঠা নেত্রীর জন্য ।
সাহারা আপা যখন স্বরাষ্ট মন্ত্রী হলেন তখন একদিনের কথা খুব মনে পড়ছে । সেই সময়ে আমি একুশে টেলিভিশনে কাজ করতাম। সহকর্মী জেমসন মাহবুব ‘একুশের চোখ’ এর কাজ করতে রংপুরের বদরগঞ্জে যায় । সেখানকার সম্ভবত ইউপি চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী মাহবুবকে ঘিরে ফেলে এবং তার ওপর নির্যাতন করে । এ খবর শোনার পর হারুন ভাই (এখন বাংলা ট্রিবিউনে আছেন) আমাকে বললেন আপনি স্বরাষ্ট মন্ত্রীক বলেন যাতে ব্যাবস্থা নেয় এবং মাহবুবকে উদ্ধার করে দেয় অক্ষত অবস্থায়। আমি সচিবালয়ে মন্ত্রীর দফতরে যাই তখন সম্ভবত সোয়া দুই টা বাজে । পিআরও ও পিএসকে বললাম জরুরী বিষয় আপার সাথে একটু দেখা করবো । পিএস ছিলেন হান্নান ভাই আর পিরআরও ছিলেন সাহিন ভাই। উনি ভিতর থেকে এসে বললেন একটু বসো উনি কাজ করছেন। কিছুক্ষন পর আমাকে বললো এখন আসো । আমি ভিতরে ঢুকে দেখি আপা ফাইল দেখছেন । এর ফাঁকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কি হয়েছে তোমার ?
আমি বললাম আপা আমার কিছু হয়নি আমার সহকর্মীর কথা বললাম। তখনো আটকে রেখেছিল মাহবুবকে।আমাকে আপা বললেন, তুমি ওকে ফোন দাও আমি কথা বলি । আমি মাহবুবকে ফোন দিলাম আপা প্রায় আধা ঘন্টা মাহবুবের কাছ থেকে ঘটনা শুনেন। তারপর নির্দেশ দেন স্থানীয় প্রশাসনকে । পরে মাহবুবকে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে ।
আজ ভীষন মনে পড়ছে এসব কথা। অনেক অনেক স্মৃতি আছে …. তবে বেশী খারাপ লাগছে একজন সহযোদ্ধাকে হারালেন বঙ্গবন্ধুকন্যা !! বিদায় সাহারা আপা; পরপরারে ভাল থাকবেন আর আপনি বেঁচে থাকবেন আপনার কর্মে ।।
সাজেদা পারভীন সাজু
বিশেষ প্রতিনিধি, জিটিভি
(লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া )
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি