সব
ওলিকূলের শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রঃ) ও ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র ভূমি ও শ্রী চৈতন্যের লীলাভূমি আমাদের প্রিয় সিলেট। যুগে যুগে কালে কালে এখানে জন্ম নিয়েছেন অনেক কীর্তিমান পুরুষ।যারা কৃতকর্মের মাধ্যমে বৃহত্তর সিলেট তথা সারা বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী। আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিবেদিত প্রাণ সৎ ও সাহসী রাজনীতিবিদ ফরিদ গাজী ছিলেন আপোষহীন ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতির প্রবাদপুরুষ।
শৈশবকাল থেকে দেওয়ান ফরিদ গাজী জনসাধারণের কল্যাণে কাজ করে মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ‘কুইট ইন্ডিয়া’ বা ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি শুরু করেন। আসামের রাজনীতিতে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে অনেক আন্দোলনের অগ্রণী সেপাই ছিলেন দেওয়ান ফরিদ গাজী। ১৯৪৫ সালে আসামে অহমীয়দের ‘বাঙ্গাল খেদাও’ অভিযানের প্রতিবাদে আন্দোলন এবং লাইন প্রথা বিলোপ আন্দোলনে অগ্রভাগে ছিলেন ফরিদ গাজী। এ সব আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য বহুবার তাঁকে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ১৯৪৭ সালে সিলেটের গণভোটে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনাপর্বে তিনি সিলেটে আন্দোলন সংগঠনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিহত করার লক্ষ্যে সূচিত শান্তি আন্দোলনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল।
তাছাড়া ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন দেওয়ান ফরিদ গাজী। ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক যে গণ-অভ্যুত্থানে আইয়ুুব খানের পতন ঘটে, তাতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়ী হন।
আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নিবেদিত প্রাণ সৎ ও সাহসী রাজনীতিবিদ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, সিলেট আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রণাঙ্গনের ৪ ও ৫ নং সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা। দেওয়ান ফরিদ গাজী ১৯৭২ সালে প্রথম হস্তলিখিত বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের স্বাক্ষরকারীদের একজন। ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সব কটি আন্দোলনে দেওয়ান ফরিদ গাজী ছিলেন প্রথম কাতারে।
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে দেওয়ান ফরিদ গাজীর হাত ধরে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার জন্য দেওয়ান ফরিদ গাজী বৃহত্তর সিলেটের প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জে চষে বেড়িয়েছেন। সিলেট শহরের নিজ বাসভবনটি ছিল আওয়ামী লীগের কার্যালয়। কারণ দলীয় নেতাকর্মীরা সবসময় এই বাড়িটিতে ভিড় করত। একজন নিখাদ সিলেটি ছিলেন দেওয়ান ফরিদ গাজী। সিলেটের উন্নয়নে সবসময় ছিলেন অন্তঃপ্রাণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃত্যুর পর আজ পর্যন্ত সিলেটে তাঁর নামে কোন প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা গড়ে উঠেনি। দেওয়ান ফরিদ গাজীর নামে সিলেটে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
দেওয়ান ফরিদ গাজী অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টে সহায়তার হাত বাড়াতেন। এ ব্যাপারে কখনো তিনি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন না। তিনি ছিলেন পুরোপুরি গণতান্ত্রিক। সবার কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিতেন। নিজের মতামত কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকেও আপন করতে পারতেন তিনি। তিনি ছিলেন নিরহংকার ও অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। উদার হৃদয়ের মানুষ ফরিদ গাজী দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আজীবন কাজ করে গেছেন।এই ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ জননেতা ৬০-৭০ বছর জাতীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে গেছেন। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে, আদর্শে সমুজ্জ্বল হয়ে। আমি তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
লেখক: সুব্রত তালুকদার
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক
নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি