সব
“যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার”
প্রায় সাত যুগ আগে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যর লেখা কবিতার এই পঙক্তিমালাগুলো আমরা বাঙালীরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হৃদয়ে লালন করে আসছি। শিশুদের জন্য একটি সুন্দর বেড়ে উঠার পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমাদের বড়রা বা অভিভাবকেরা যুগ যুগ ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আমাদের সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বিধায় আজ আমরা শিশুশ্রম এবং শিশুনির্যাতন প্রতিরোধ করে শিশুদের মেধা ও মনন বিকশিত হয় এমন অনেক রিসোর্সেস সৃষ্টি করার মাধ্যমে শিশুদের উপযোগী একটি সমাজ বিনির্মানে অনেকটাই সক্ষম হয়েছি বলা চলে। আমাদের পিতা,পিতামহ এবং প্রপিতামহসহ সকল পূর্বসুরী যারা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সুন্দর একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন তাদের স্বপ্ন আজ অনেকটাই বাস্তবে পরিনত হয়েছে। আমাদের শিশুরা শিক্ষা দীক্ষায় এগিয়ে যাবে এবং দেশের সুনাম বয়ে আনবে এটা আমাদের আজন্ম শুভ লালসা। আর সেই মধুর স্পৃহা আছে বলেই আমরা নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশের গর্বিত সন্তান এবং পরমোল্লসিত অভিভাবক হতে পেরেছি৷ আমাদের শিশুদেরকে শিক্ষা দীক্ষায় আরো এগোতে হবে, পৃথিবীকে জয় করতে হবে। কিন্তু সবার আগে তাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে।
কেননা বেঁচে থাকার এবং বাঁচিয়ে রাখার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন, শিক্ষার জন্য বেঁচে থাকার প্রয়োজন ক্ষীন৷
গতকাল প্রথম সারির অনলাইন পোর্টালগুলোর নিউজে দেখলাম দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরায় চালু করতে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামীম আরা নাজনীন স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনায় এ কথা জানানো হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় পুনরায় চালুর নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিদ্যালয় চালুর আগে অনুমোদিত নির্দেশিকার আলোকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। (খবর দৈনিক ইত্তেফাক- অনলাইন ০৮ সেপ্টেম্বর)
তবে কখন বা কবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে সেটা এখনো নিশ্চিত করে জানানো হয়নি। সিলেটের স্থানীয় একটি অনলাইন নিউজপোর্টাল Sylhettoday24. com এর খবর আগামী মাসেই অর্থাৎ অক্টোবরের শুরুতেই স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। আমার মনে প্রশ্ন আমরা কি তাহলে করোনা বিজয়ের পথে? করোনাকে আমরা যুদ্ধে হারিয়ে দিয়েছি? হয়তো তাই। আর তা না হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলে দেওয়ার চিন্তাও অন্তত করতে পারতাম না।
আমরা দেখেছি এবং দেখছি স্বাস্থ্যবিধি বা সীমিত আকার কাকে বলে ও কতপ্রকার! কেননা অফিস আদালত, গণপরিবহন, শপিংমল সবকিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করার নির্দেশনা থাকলেও স্বাস্থবিধি বা সীমিত আকার শব্দগুলোকেই যেন আমরা সবাই মিলে এখন হাস্যকর করে তুলে ফেলছি। কিন্তুু তারপরও মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে এই সিদ্ধান্তগুলো জরুরি হয়ে পড়েছিলো। এবং অবশ্যই সেগুলো ভালো সিদ্ধান্ত ছিলো বলে আমি মনে করি। স্বাস্থ্যবিধি মানছি না আমি, তাই বলে সেটা সরকারের দোষ? অবশ্যই না।
কিন্তু আমার কথা হচ্ছে শিক্ষিত এবং প্রাপ্তবয়স্করাই যেখানে সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনা মানছেন না, সেখানে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানবে সেটা বিশ্বাস হয়?
এখনও পরিস্কার নয় যে ঠিক কবে নাগাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে, তবে যদি অক্টোবরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার সিদ্ধান্ত আসে তাহলে করোনাকালে আমাদের গৃহিত সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে এটি।
আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সবকিছু খোলে দেওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর তেমন কোনো পথ খোলা ছিলো না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার পৃথিবীর বুকে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে আমি মনে করি। পৃথিবীর বাঘা বাঘা দেশগুলোর চেয়েও করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার বেশী সফল। করোনাকালে বারবার সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রশাসনসহ সরকারের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী বৃন্দের অপরিসীম অবদান রয়েছে এবং সেটা জাতি অবশ্যই অনেকদিন মনে রাখবে।
সাধারন মানুষ মনে করছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলে দেওয়ার মতো পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। আমাদের শিক্ষা মন্ত্রী ড. দিপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেনও একাধিকবার মিডিয়াকে বলেছেন যে স্কুল খোলে দেওয়ার পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। কিন্তুু মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামীম আরা নাজনীন স্বাক্ষরিত নির্দেশনাটি মিডিয়ায় আসার পর থেকেই অভিভাবকমহলে শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা।
কেননা শিক্ষা অবশ্যই জরুরি কিন্তুু বাচ্চাদের বা তাদের অভিভাবকদের জীবনের চেয়ে তা কোনভাবেই বেশি জরুরি নয়।
তাছাড়া এই করোনাকালে
কোন শিক্ষার্থী লেখাপড়া বন্ধ করে বসে আছে তেমনটি কিন্তুু নয়৷ বরং নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে করোনাকালে ঘরে বসে অধিক মনোযোগসহকারে সিলেবাস সম্পন্ন করছে।
তাই সবার চাওয়া আগে করোনাভাইরাস শেষ হোক,
আমরা বেঁচে ফিরি;
তখন না হয় শিক্ষা দীক্ষায় আরো মনোযোগী হওয়া যাবে।
জীবন একটাই- আমাদের বেঁচে থাকা বড্ড প্রয়োজন।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি