সব
করোনা মহামারির মধ্যেও সিলেটে থেমে নেই পরিবেশ ও প্রকৃতি বিনাশী কর্মকাণ্ড। প্রকৃতিকন্যা হিসেবে পরিচিত সিলেট এখন প্রকৃতি ধ্বংসের কারণে সেই সুনাম হারাতে বসেছে। করোনাকালেও সিলেটে অন্তত অর্ধশতাধিক পাহাড়-টিলা কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে পাহাড় ও টিলাধসের ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট অঞ্চল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট মহানগর ও এর আশপাশ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জে এই করোনাকালেও প্রায় প্রতিদিন পাহাড়-টিলা কাটা হচ্ছে। ভরাট করা হচ্ছে দীঘি ও পুকুর। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে সিলেটের প্রকৃতিতে।
সিলেটে পাহাড়-টিলা কাটা বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগ না থাকায় ‘পাহাড়-টিলা খেকোদের’ আগ্রাসন দিন দিন বাড়ছে। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে বন্যপ্রাণীরা হারাচ্ছে আবাসস্থল। অনেক সময় বানরসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসে এবং প্রাণ হারায়।
সম্প্রতি শহরতলীর আরামবাগ এমসি কলেজ রোডে টিলা কাটা হয়েছে। ওখানে টিলা কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে সিলডন হাসপাতাল। রাতের আধাঁরে টিলার মাটি কেটে বিক্রি করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর ছিল নীরব।
তবে করোনার কারণে সিলেটে পর্যটকদের আনাগোনা কম হওয়ায় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে প্রকৃতি একটু উন্নতি হয়েছে। ময়লা আবর্জনা ও পলিথিনের দূষণ কিছুটা কম হয়েছে।
জাফলং, বিছানাকান্দি ও ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এবং উৎমাছড়ায় পাথর জমেছে। পাথরের ফাঁক দিয়ে ছোট ছোট গাছ গজিয়েছে।
পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রকৃতিতে। গত মে মাসে সিলেটে স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। এতে এবারের সেচ মৌসুমে সেচকাজের খরচ বৃদ্ধি হওয়াসহ নানা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা।
মে মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, সিলেট বিভাগে গত মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫১০ মিলিমিটার হওয়ার কথা। কিন্তু হয়েছে ২৯১ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ কম। এই ভরা বর্ষা মৌসুমেও সিলেটের হাওরে এখনো পানি নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং সুরমা রিভার ওয়াটার কিপার আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘গত ৩০ বছরে সিলেটের ৫০ ভাগ পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। পাহাড়-টিলা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। সিলেট মহানগরে ও আশপাশ উপজেলায় প্রায় ৭০ ভাগ জলাভূমি, পুকুর ও দীঘি ভরাট। জলাভূমি বিলীন হওয়ার কারণে জলাভূমিকেন্দ্রিক বৃক্ষ হিজল-করচ এখন বিলুপ্তির পথে। এ কারণে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্যও।’
এই বর্ষায় মহানগর ও আশপাশ এলাকায় একবারও একটি ব্যাঙের ডাকও শোনা যায়নি জানিয়ে এই নদীকর্মী বলেন, ‘ব্যাঙের এই বিলুপ্তির কারণে সিলেটে মশা ও পোকা বেড়েছে। পরিবেশ ঠিকঠাক থাকলে ব্যাঙও থাকত। একই সঙ্গে পোকা ও মশার প্রাদুর্ভাব কম হতো। পরিবেশের সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের সম্পর্ক থাকায় সিলেটের সব কিছুই বদলে যাচ্ছে।’
গত মে মাসে সিলেটে তুলনামূলক সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাতও হয়েছে জানিয়ে আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘পাহাড়, টিলা ও সবুজ বনায়ন ধংসের কারণে বৃষ্টিপাতও কমে গেছে। পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। ঘনঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। আমরা পাহাড়-টিলা কেটে পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছি। যার কারণে অতি সাম্প্রতিক সময়ে আমরা সিলেটে দফায় দফায় ভূ-কম্পন অনুভব করলাম।’
পরিবেশ অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, ‘সিলেটে পাহাড়-টিলা কাটা বন্ধে আমরা সক্রিয় রয়েছি। সীমিত সংখ্যক জনবল নিয়ে টিলা কাটা বন্ধে আমরা সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা করছি। তারপরও কেউ পাহাড়-টিলা কাটলে পরিবেশ অধিদফতর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা আদায় করছে।’
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি