সব
পাকিস্তানের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। এখন মানুষ নির্বাচনের ফলের অপেক্ষা করছেন। অনেকটা দেরি হলেও ধীরে ধীরে নির্বাচনের ফল ঘোষণা শুরু করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে অর্ধেকের বেশি আসনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখনো এগিয়ে আছেন।
এবার দেখে নেওয়া যাক ৮ ফেব্রুয়ারির সংসদীয় নির্বাচনের মূল তিন খেলোয়াড়ের মধ্যে কে কেমন খেল দেখালেন—
বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি তার আসন থেকে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। তিনি লাহোরের ১২৭ নম্বর সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচন করেছেন। এই আসনে তার বিপক্ষে নির্বাচন করেছেন পিএমএল-এন-এর আতাহুল্লাহ তারার, পিটিআই সমর্থিত মালিক জহির আব্বাস খোখার এবং জামায়াত-ই-ইসলামির (জেআই) সৈয়দ ইহসান উল্লাহ ওয়াকাস। তবে বিলাওয়াল ও অন্য প্রার্থীরা ঠিক কত ভোট পেয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি।
এখন পর্যন্ত ঘোষিত ফল অনুযায়ী, বিলাওয়ালের দল পিপিপি ৩৭ আসন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। সামনে আরও কিছু আসন পেতে পারে দলটি।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত তরুণ মুখ বিলাওয়াল। তিনি দেশটির বিখ্যাত ভুট্টো-জারদারি বংশের সন্তান। তার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি। আর মা পাকিস্তান তথা মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। তিনি দুবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৭ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান তিনি। এ ছাড়া বিলাওয়াল পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর নাতি।
২০২২ সালে ইমরান খানের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে তিনি নতুন জোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত মাত্র ৩৫ বছর বয়সী বিলাওয়াল এবার পারমাণবিক শক্তিধর দেশটির প্রমানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। অবশ্য তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে দেশটি যেহেতু পাকিস্তান তাই আগে থেকে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। সব ঘটার দেশে যে কোনো কিছুই ঘটে যেতে পারে।
ফল ঘোষণার আগের রাতে এক এক্সবার্তায় বিলাওয়াল বলেন, ফল অবিশ্বাস্যভাবে ধীরগতিতে আসছে। তবে প্রাথমিক ফল খুবই উৎসাহজনক! পিপিপি প্রার্থী এবং আমাদের সমর্থিত স্বতন্ত্ররা ভালো করছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়…।
নওয়াজ শরিফ
এবারের নির্বাচনে চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করছেন নওয়াজ শরিফ। তিনি লাহোরের ১৩০ আসন থেকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন।
পাকিস্তানি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নওয়াজ এক লাখ ৭১ হাজার ২৪ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পিটিআই-সমর্থিত ড. ইয়াসমিন রশিদকে পরাজিত করেছেন। তিনি এক লাখ ১৫ হাজার ৪৩ ভোট পেয়েছেন।
সামগ্রিক ফলে এখানো দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নওয়াজের দল পিএমএল-এন। এখন পর্যন্ত তারা ৪৩টি আসন পেয়েছে। অবশ্য পিএমএল-এনের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত পাঞ্জাবের অর্ধেকের বেশি আসনে এখানো ফল ঘোষণা করা বাকি।
নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তবে কোনোবারই তিনি মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর বিরাগভাজন হয়ে যুক্তরাজ্যে চার বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে কাটান। তবে গত বছর সেনাবাহিনীর সঙ্গে ‘সমঝোতা’ শেষে নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। এবারের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে বেশ এগিয়ে আছেন তিনি।
ইমরান খান
এবারের নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তার দল পিটিআইকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। চার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ইমরানকে ৩৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১০ বছরের জন্য তাকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে পিটিআই ও ইমরান-সমর্থকদের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে এসব সাজা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কারাগারে বন্দি তিনি।
নির্বাচনে না দাঁড়ালেও জনগণের মাঝে ইমরান খান ও তার দল পিটিআয়ের বেশ প্রভাব রয়েছে। ফলে এবারের ভোটে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশ ভালো করছেন। অর্ধেক আসনের ফল ঘোষণায় দেখা যায়, ইমরান খানের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশ এগিয়ে আছেন।
২৬৫ আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪৬টি আসনের ফল ঘোষণা করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬০টি আসনে জয় নিয়ে এখনো এগিয়ে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এবারের নির্বাচনে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা জিতলে ইমরান খানের ভাগ্যে কী ঘটবে তা নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি