সব
সম্প্রতি শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে দেশে যে বিতর্ক উঠেছে এর পেছনে অপরাজনীতি রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
তিনি বলেন, যারা বিষয়টাকে উসকানি দিচ্ছে তার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। অপরাজনৈতিক শক্তির তিলকে তাল বানানোর একটা প্রবণতাও সেখানে আছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের বাসভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত চা-চক্র শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে তিনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সিজিপিএ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীরা এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন।
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে চলমান বিতর্ক প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে সবার সাথে আলোচনা করব, সবার মতামত নেব। যারা অতিমাত্রায় সংবেদনশীল তারা বেশি দুঃখিত হন, তা চাইব না। আবার যারা কম সংবেদনশীল তাদের বিষয়টাই শুধু প্রাধান্য পাবে, এমনটিও নয়। সেখানে একটা ভারসাম্য অবশ্যই থাকবে। সেজন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, যে বিতর্কটা সৃষ্টি হয়েছে সেটার সমাধান হবে।
এর আগে উপাচার্য ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিবুল হাসান চৌধুরী নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে চলমান বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ইসলামি শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি কমিটি করেছি। সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেশ কয়েকজন ইসলামি চিন্তাবিদ। তারা আমাদের জানাক, ধর্মের দিক থেকে কোনো সংবেদনশীলতা আছে কি না? তাছাড়া তথ্যগত দিক থেকে এই শিক্ষা ওই বয়সের শিশুদের জন্য যথাযথ কি না এই আলোচনাটাও এখানে আছে। তাছাড়া এনসিটিবি ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের যে বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন তাদেরও মতামত নেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, সব সমালোচনা অগ্রহণযোগ্য এমনটি বলছি না। সমালোচনা হবেই। আলোচনাও হবে। কিন্তু যেখানে যে বিষয়ের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা বা সংযোগ নেই সেটাকে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। সেটা একেবারেই অমূলক অভিযোগ।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক প্রয়োজনে, অ্যাকাডেমিক প্রয়োজনে একটা মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে যেসব অবকাঠামো তৈরি করা দরকার তা অনুমোদন নিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারি, সেজন্য শিক্ষকদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। অ্যাকাডেমিক মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা আরও বাড়বে।
অর্থনীতির সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও বেশি সংযুক্তি এবং ইন্ড্রাস্ট্রির সাথে অ্যাকাডেমিয়ার সম্পর্ক যেন আরও বাড়ে সেজন্য কাজ করতে হবে জানিয়ে মহিবুল হাসান বলেন, দেশের সব ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নেতৃত্বপূর্ণ অবস্থান তা যেন আরও বাড়ানো যায়—সেজন্য কাজ করতে হবে। তবে তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু কাঠামোগত উন্নতি হলেই হবে না—বাড়াতে হবে গবেষণাও।
শিক্ষাবিদ এবং সংশ্লিষ্টদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে। তাদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের বিকাশ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে চা-চক্র আয়োজন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, এটি শতবর্ষ উপলক্ষে নেওয়া পরিকল্পনার অংশ। তৃতীয়বারের মতো এই আয়োজন করা হয়েছে। আগের দুইবার যাদের দাওয়াত করতে পারিনি, এবার তাদেরও দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ইমেরিটাস অধ্যাপকদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নবীন ও প্রবীণদের মেলায় পরিণত করার চেষ্টা করেছি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মিলনমেলার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের কীভাবে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হবে তা শিখতে পারবে। আশা করি, তোমরা এটি অনুধাবন করেছ। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে জীবনের অনুকরণীয় পথ খুঁজে পেলে তোমাদের জীবন সুন্দর হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে চাই। সেটি এমন যে, সমাজে এর প্রভাব কেমন? স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়, স্মার্ট ক্যাম্পাস এই হলো আমাদের প্রতিপাদ্য। রূপান্তরের জন্য অ্যাকাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রায় প্রস্তুত। খুব দ্রুতই এটি বাস্তবায়ন করার কাজ শুরু হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ এফ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, প্রক্টর ও প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি