সব
চলতি বছরই নতুন দলের নিবন্ধন দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে চলতি মাসেই আবেদন আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হতে পারে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নতুন দল নিবন্ধনের একটি আইন আছে। আইনে নির্ধারিত প্রক্রিয়া মেনে হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।
দল নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, প্রতি সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নতুন দল নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করার বিধান রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে নির্বাচনমুখী দলগুলোকে নিবন্ধন দিয়ে থাকে ইসি। নিবন্ধন না থাকলে কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি কমিশনের কাছে উপস্থাপনের জন্য নথি প্রস্তুত করা হচ্ছে। কমিশন অনুমোদন দিলে যে কোনো সময় জারি হতে পারে গণবিজ্ঞপ্তি।
সর্বশেষ দল নিবন্ধনের জন্য ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। সময় দেওয়া হয়েছিল ওই বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল ৭৬টি রাজনৈতিক দল। কেএম নূরুল হুদা কমিশন নানা কারণে সবার আবেদন বাতিল করেছিল। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।
তার পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে ৪৩টি দল আবেদন করেছিল। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন সে সময় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট- এই দু’টি দলকে নিবন্ধন দেয়।
ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০০৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়। সে সময় ১১৭টি দল আবেদন করেছিল। যাচাই- বাছাইয়ের পর নিবন্ধন পায় ৩৯টি দল। সবমিলিয়ে গত ১৪ বছরে মোট ৪৪টি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ও আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিলও করা হয়। ফলে বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৩৯টি।
নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), গণতন্ত্রী পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি – এলডিপি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি),বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাকের পার্টি, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
যে পাঁচ দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে-বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ফ্রিডম পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিডিপি) ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ অনুযায়ী নতুন দলে নিবন্ধন পাওয়ার শর্ত- (১) অতীতে যে কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংশ্নিষ্ট দলের অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকবে হবে অথবা (২) অতীতের কোনো নির্বাচনে দলটির অংশ নেওয়া প্রার্থীদেরকে আসনগুলোর মোট ভোটের পাঁচ শতাংশ ভোট পেতে হবে। অথবা (৩) নিবন্ধন পেতে হলে দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ(২১টি) প্রশাসনিক জেলায় এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমিটি ও কার্যালয় থাকবে হবে। একইসঙ্গে প্রতিটি ইউনিটে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন আছে বলে প্রমাণ থাকতে হবে। তিনটি শর্তের যে কোনো একটি অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
এছাড়া আবেদনপত্রের সঙ্গে নতুন দলগুলোকে- গঠনতন্ত্র, দলের বিধিমালা (যদি থাকে), নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সব সদস্যের পদবিসহ নামের তালিকা, দলের লোগো ও পতাকার ছবি, দলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও এর সর্বশেষ স্থিতি এবং তহবিলের উৎস ইত্যাদি তথ্যও জমা দিতে হবে।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি