সব
সুনামগঞ্জে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। জেলার সব উপজেলায় ধান কাটার ধুম পড়েছে। এবারের ভালো ফসলে কৃষকের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেছে। কৃষকরা বলছেন, খুবই ভালো ফলন হয়েছে। তবে ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলার বিশাল কর্মযজ্ঞে দেখা দিয়েছে শ্রমিক ও হারভেস্টার সংকট।
বাড়তি মজুরি দিয়েও শ্রমিক মিলছে না। রয়েছে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের সংকটও। ধান কাটার ভরা মৌসুমে কম্বাইন হারভেস্টার কেলেংকারী নিয়ে জেলাজুড়ে আলোচনা রয়েছে। কৃষকরা ধান কাটার এই যন্ত্র না পেয়ে হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
জানা গেছে, সরকারের কাছ থেকে ৭০ ভাগ টাকা ভর্তুকি নিয়ে কেনা জেলার ৮৭৩টি কম্বাইন হারভেস্টারের বড় একট অংশ গোপনে বিক্রয় হয়েছে অন্য জেলায়। এসব ধান কাটার যন্ত্র স্ব স্ব এলাকায় নেই। কিন্তু কৃষি অফিসের তালিকায় এখনো এই কম্বাইন হারভেস্টারকে দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’।
কৃষকদের অভিযোগ, কম্বাইন হারভেস্টার কেনা-বেচায় কৃষি অফিসের দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ থাকায় তালিকায় এখনো হারভেস্টার দেখানো হচ্ছে।
শাল্লার হবিবপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবলু রায় ও তার সহোদর পৃতেশ রায়ের নামে দুই বছর আগে ভর্তুকির কম্বাইন হারভেস্টার বরাদ্দ হয়। ইউপি সদস্য বাবলু রায় দুই বছর আগেই তার বরাদ্দের হারভেস্টার বিক্রয় করে দিয়েছেন অন্য জেলায়। কিন্তু এখনো শাল্লার হারভেস্টারের তালিকায় তার নাম রয়েছে।
বাবলু রায় নিজেই বলেছেন, দেড় লাখ টাকা লাভে তিনি অনেক আগেই হারভেস্টার বিক্রি করেছেন।
কেবল বাবলু রায় নয়, জেলাজুড়ে তালিকায় থাকা অনেক হারভেস্টার এখন আর এলাকায় নেই। ভর্তুকির এই ধান কাটার যন্ত্র লাখ লাখ টাকা লাভে অন্য জেলায় বিক্রয় করা হয়েছে। এমন তুঘলকি কাজের সঙ্গে কৃষি অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
গেল তিন দিনে জেলার সাত উপজেলায় ৭০ জন কম্বাইন হারভেস্টারের মালিককে ফোন দিয়ে সুখকর তথ্য পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগেই তার কেনা হারভেস্টার কোথায় আছে, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন। কেউ বলেছেন, বিকল আছে যন্ত্রটি। বার বার ফোন দিলেও কেউ কেউ রিসিভ করেননি।
কৃষি অফিসেরই একজন কর্মচারী জানিয়েছেন, অনেক কৃষকের কেবল জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কম্বাইন হারভেস্টারের ব্যবসা করেছেন রাজনৈতিক কর্মী ও কৃষি অফিসের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী। অফিসের রেকর্ডে যে ফোন নম্বর দেওয়া আছে, শুরু থেকেই এগুলো বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
জামালগঞ্জ উপজেলার রামপুরের তাজউদ্দিন জানালেন, তার কম্বাইন হারভেস্টার নেত্রকোনায় আছে। শরীফপুরের আরশ আলী জানান, তার হারভেস্টার বিকল আছে।
শাল্লার আনন্দপুরের মনোহর রায়, নিজগাঁওয়ের রুহুল আমিন, কাশিপুরের দিপক চন্দ্র দাস একই গ্রামের দিপু চন্দ্র দাস কম্বাইন হারভেস্টার অন্য জেলায় বিক্রয় করেছেন অনেক আগেই। কিন্তু কৃষি অফিসের তালিকায় এখনো ওখানেই দেখানো হচ্ছে।
একই এলাকার মৃদুল চন্দ্র দাসের হারভেস্টার তালিকায় অচল দেখালেও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এটিও অন্য জেলায় বিক্রয় হয়েছে। একই এলাকার আকাশ রায়ের হারভেস্টার কৃষি অফিসের তালিকায় অচল দেখালেও এটি এলাকায় কোনো দিন কেউ দেখেইনি বলে জানালেন স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য সুব্রত দাস।
বাহাড়া’র দীপংকর দাস ও কাশিপুরের ছালাউদ্দিন আদনানের হারভেস্টারও অন্য জেলায় বিক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু এখনো শাল্লার তালিকায় দেখানো হচ্ছে ওই যন্ত্রগুলোকে।
ধানের বাম্পার ফলন, শ্রমিক ও হারভেস্টার সংকটে কৃষক
শাল্লার ছায়ার হাওরপাড়ের আনন্দপুরের কৃষক রাখাল দাস ও কাশিপুরের বাবলু মিয়া বললেন, কৃষকের নামে ভুর্তকির ধান কাটার মেশিন নিয়ে তারা ব্যবসা করেছে। আর আমরা হারভেস্টারের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছি। ধান কাটার শ্রমিকও মিলছে না। মহাবিপদে পড়েছি।
শাল্লার একজন গণমাধ্যম কর্মী জানান, শাল্লা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিভুতোষ চৌধুরী হারভেস্টার যন্ত্র কেলেংকারীতে সহায়তা করেছেন এমন অভিযোগ অনেক কৃষক জানিয়েছেন।
অবশ্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিভুতোষ চৌধুরী বলেছেন, তার মাধ্যমে কম্বাইন হারভেস্টার কেনা-বেচা হয়েছে এমন তথ্য সঠিক নয়। এমন অনিয়মের সঙ্গে কখনোই যুক্ত ছিলেন না তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, আমি যোগদান করার পর হারভেস্টার যন্ত্রের বিষয়ে কড়া নজরদারি রাখছি। গেল দুই বছর সকল কম্বাইন হারভেস্টার বিধি মোতাবেক কেনা হয়েছে। তবুও এই বিষয়ে খোঁজখবর নেব আমি। তিন বছর পর মালিকানা হস্তান্তর করতে পারেন হারভেস্টার যন্ত্রের মালিকরা। সেক্ষেত্রে ভুর্তকির টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে। কৃষি অফিসকে বিষয়টি জানিয়ে হস্তান্তর করতে হবে। কম্বাইন হারভেস্টার সংশ্লিষ্ট এলাকায় নেই, অথচ তালিকায় দেখানো হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি