সব
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ধলই চা বাগান টানা ২৭ দিন থেকে বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে বাগান খুলে দিতে বেশ কয়েকবার শ্রমিকরা আন্দোলন করে। শ্রমিকদের আন্দোলনকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করার জন্য একটি চক্র নানা ধরনের পায়তারা শুরু করেছে। সেই পায়তারার অংশ হিসেবেই ধলই চা বাগান কোম্পানীর এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান বাদী হয়ে শনিবার (২২ আগস্ট) রাতে ইউপি চেয়ারম্যান, চা শ্রমিক নেতাসহ ১৩ জনের নামে মামলা করেন। এতে গতিরোধ করে মারপিট, গাড়ি ভাঙ্গচুর ও টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করা হয়।
তবে শ্রমিকরা জানায়, আমরা বাগান খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করেছি বলেই আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এতে আমরা থেমে যাবো না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। চা বাগান বন্ধ রাখায় কমলগঞ্জের ১৩টি চা বাগানের শ্রমিকরা চাঁদা তুলে ধলই চা বাগানের শ্রমিকদের সহযোগীতা করে যাচ্ছে।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গত দি সিলেট টি কোম্পানী (ধলই চা বাগান কোম্পানী)-র সহকারি -মহাব্যবস্থাপক খালেদ মঞ্জুর খান উল্লেখ করেন মামলার ১ নং আসামী মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়রম্যান পুষ্প কুমার কানুম ২নং আসামী চা যুব নেতা মোহন রবিদাস ও ১১ নং আসামী চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীনের উস্কানীতে ধলই চা বাগানের বাকী আসামীগন চা বাগান ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে নির্ধারিত মজুরীর চেয়ে অধিক মজুরি বে-আইনীভাবে আদায়ের স্বার্থে বেশ কিছুধীন যাবৎ পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
এরই পরিপেক্ষিতে গত ২৯ জুন সকল আসামীগণ সহ উশৃঙ্খল শ্রমিকগণ বাগানে অবৈধ বে-আইনী ধর্মঘট করে ব্যবস্থাপককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে জোর পূর্বক বের করে দেয়। এ প্রক্ষিতে ধলই চা বাগানের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।পরবর্তীতে প্রশাসনও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মধ্যস্থতায় ধলই চা বাগানে স্বাভাবিক কার্যক্রম ১৯ আগস্ট থেকে চালুর সিদ্ধান্ত হয়।
দীর্ঘদিন পর ধলই চা বাগানের উৎপাদন কার্যক্রম পূণরায় সচল হওয়ায় তিনি (এজিএম খালেদ মঞ্জুর খান) কোম্পানীর সহকারী- মহাব্যবস্থাপক হিসেবে ১৯ আগস্ট সকাল ১১টায় তদারকি কাজে ধলই চা বাগানে গিয়েছিলেন। এসময় চা বাগানের ব্য্স্থাপক, সহকারী ব্যবস্থাপকসহ বাগানের সকল কর্মচারীর জুলাই মাসের বেতন ও মজুরি পরিশোধের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা নিয়ে যান। এসময় সকল আসামীরা লাঠি, লোহার রড নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে কোম্পানীর জীপ গাড়ির (ঢাকা মেট্রো- ড-০৫-০০১৫) গতিরোধ করে। এসময় ১ নং আসামীর হুকুমে বাকি আসামীরা গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গচুর করে। আসামীরা তাকে জোর পূর্বক টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারপিট করে জখম করে। আসামীরা গাড়িতে বেগের ভিতর রাখা ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আসামীরা একটি নোহা মাইক্রোবাসে করে পালিয়ে যায়। পরে তিনিসহ আহতরা মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেন। ফলে ঘটনার ২ দিন পর শনিবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন, শিব নারায়ণ শীল (৫৫), তুলশী দাস মাদ্রাজী (৫০), পিংকা কালোয়ার (৫৫), অমৃত কুমার পাশী (৪৬), মো. ফরিদ আলী (৪৫), মো. ইরাজ আলী (২৭), লছমী ভর (৬০), সুদীপ্ত ভর (২৬),ভর (৬০),অজিৎ পাশী (২৫), দিপেন ভর (২৫)। মামলায় ১৪ নম্বও আসামী অজ্ঞাতসহ আর ৫/৬ জনকে আসামী করা হয়।
মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, ১৯ আগস্ট ধলই চা বাগানে ব্যবস্থাপক ও সহকারি মহা ব্যবস্থাপক অবরুদ্ধ বলে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুর হক ও থানার ওসি মো. আরিফুর রহমানের নির্দেশে তিনি ধলই চা বাগানে গিয়ে বিক্ষোব্দ চা শ্রমিকদের বুঝিয়ে কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাশসহ সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তাদের উদ্ধার করেছিলেন। এখন তাকে চা বাগান কোম্পানী মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে ১নম্বর আসামী করেছে।
মামলার অপর আসামী চা যুব নেতা মোহন রবিদাস ও ১১ নম্বর আসামী চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন বলেন, ঘটনার দিন সকালে ধলই চা বাগান কোম্পানীর সহকারি মহা ব্যবস্থাপক এ মামলার বাদি খালেদ মঞ্জর খান এ চা বাগানের দুই নারী চা শ্রমিককে লাঞ্চিত করায় বিক্ষোব্দ শ্রমিকরা ইট পাটকেল মেরে জিপ গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গেছে। এর চেয়ে বেশী কোন ঘটনা ঘটেনি। এখন যাতে অনাহারে থাকা চা শ্রমিকদের অর্থ ও খাদ্য সহায়তা না দেওয়া হয় সেজন্য ঘটনার ২ দিন পর পরিকল্পিতভাবে মামলা সাজিয়েছেন। অথচ ঘটনার পর লঅঞ্চিত নারী চা শ্রমকিরা কমলগঞ্জ থঅনায় গিয়ে অভিযোগ দিলেও থানা সে অভিযোগ গ্রহন করেনি।
এ সম্পর্কে জানতে চেয়ে মামলার বাদি ও ধলই চা বাগামন কোম্পানী সহকারি মহা-ব্যবস্থাপক খালেদ মঞ্জুর খানের মুঠোফোনে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে কমলগঞ্জ থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে এসআই সিরাজুল ইসলামকে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, ১৯ আগষ্ট অবরুদ্ধ ধলই চা বাগান কোম্পানীর সহকারি মহা-ব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপককে উদ্ধার করতে মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুস্প কুমার কানুকে নির্দেশ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি