দোয়ারায় ইউপি চেয়ারম্যানের বর্বরতায় হাত ভাঙল যুবকের!

প্রতিনিধি, দোয়ারাবাজার ;
  • প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২০, ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৩ বছর আগে

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমদের বর্বরতায় হাত ভাঙল দিনমজুর অসহায় পরিবারের এক যুবকের। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নে।

এ ব্যাপারে আহত সমসের আলী বাদি হয়ে গত ১৭ আগস্ট সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দোয়ারাবাজার থানাকে মামলা এফআইআর করার নির্দেশ দেন।

অভিযোগ সূত্রে জানাযায় গত ১ আগস্ট ঈদের দিন রাতে পার্শ্ববর্তী গাজীনগর গ্রামের মসজিদের ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে মধ্যযোগীয় কায়দায় সমসের আলী (৩০) নামের ওই যুবককে ২ থেকে আড়াই শত বেত্রাঘাত করেন পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ। এসময় তার বাম হাতের কব্জির উপরে ভেঙ্গে যায়। পরে তাকে বেঁধে নিয়ে আসেন চেয়ারম্যানের বাসায় (ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে)। এরপর দ্বিতীয়বারের মত বেত্রাঘাত করে সারারাত আটকে রাখেন বাথরুমের ভেতরে। পরদিন সকালে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

রইছপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে সমশের আলী (৪০) কে বেধড়ক মারপিটের কারণে তার বাম হাত ভেঙ্গে যাওয়ায় পরিবারের লোকজন সমসের আলীকে উদ্ধার করে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তিনদিন পর তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়।

মারামারির অভিযোগে সমসের আলী চেয়ারম্যানসহ ২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে তা আমলে নিয়ে দোয়ারাবাজার থানাকে রেকর্ড করার জন্য আদেশ প্রধান করেন আদালত। তবে যেদিন মসজিদের ব্যাটারি চুরি হয় সমসের আলী দুইদিন আগে থেকেই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জেে দিন মজুরের কাজ করছিলেন বলে জানা গেছে।

মামলার বাদি সমসের আলী জানান, ”যেদিন আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রাম গাজীনগরের মসজিদের ব্যাটারী চুরি হয় সেদিন আমি ভোলাগঞ্জ কাজে ছিলাম। ঈদের দিন চেয়ারম্যান গ্রামের লোকজন পাটাইয়া আমাকে মসজিদে আসার জন্য বলেন। আমি আসার পরপরই চেয়ারম্যান নিজেই রসি দিয়া হাত বেঁধে ফেলেন। পরে তিনি দুই-আড়াইশ বাড়ি মারেন আমাকে। যখন আমার একটা হাত ভেঙ্গে যায় তখন আমি খুব জোরে চিৎকার দিয়া বলতেছি আমারে আর মাইরেন না, আমি মরে যাব। এরপরও আমাক বেদম মারতে থাকেন চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যানের বাসায় নিয়ে যান এবং দরজা বন্ধ করে আরেকবার মারপিট করে আমাকে বাথরুমের ভেতরে সারারাত বন্ধী করে রাখেন। আমি হাতের ব্যথা সহ্য করতে পারছিলাম না। কান্নাকাটি করলে তিনি আমার মুখে চাপ দিয়ে ধরে থাকেন। যেন আমি কান্নাকাটি করতে না পারি। এরপর আমাকে বাথরুমে বন্ধী করে রাখেন। খাবার পানি চাইলে চেয়ারম্যান বলেন প্রশ্রাব করে খেয়ে নে, পানি পাবে না। আমাকে সারারাত একফোটা পানিও খেতে দেয়া হয়নি। আমার অবস্থা খারাপ দেখে সকালে উনি বাথরুম থেকে বের করে দেন।”

ভোলাগঞ্জে সমসের আলীর সাথে দিন মজুরের কাজে থাকা গাজীনগর গ্রামে তফুর আলী বলেন, ‘যেদিন আমাদের গ্রামের মসজিদের ব্যাটারী চুরি হয়েছিল সেইদিন আমরা একসাথে কাজে ছিলাম।’

এ ব্যাপারে পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সে আগে থেকেই চুরি করত, সে কারণে তাকে গ্রামের লোকজন ডেকে এনে জিজ্ঞেস করছিলেন এবং গ্রামের লোকজন সমসের আলীকে মারধর করতে ছাইছিলেন, আমি মারতে দেইনি। আমি কয়েকটা চড়থাপ্পড় মারছি তাকে। তাকে রাতে ছেড়ে দেইনি তার পরিবারের লোকজন যদি গুম মামলা করে এর জন্য। এজন্য আমি তাকে সকালে ছেড়ে দিয়েছি।’

এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, যদি সে চুরি করেই তাকে এভাবে মারধর করতে পারেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। চুরি করলে তাকে আইনের হাতে তুলে দিতে পারতেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি