সব
গোলাপগঞ্জে গত দুইমাসে প্রায় ১ কোটি টাকার মাদক জব্দ ও চোরাই পণ্য জব্দ এবং ১৪ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ।
এছাড়াও এই দুই মাসের ভিতরে ভারত থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসা ৬১ লক্ষ টাকার একটি মোবাইলের বড় চালান জব্দ এবং ৯জন জুয়াড়িকে নগদ টাকা সহ আটক করে পুলিশ।
গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, যোগদানের পর তিনি গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে তিনি মাদক বিরোধী অভিযান শুরু করেন। এই কাজে পরামর্শ ও সহযোগিতার করেন সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোলাপগঞ্জ সার্কেল) রাশেদুল হক চৌধুরী।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত দুই মাসে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৪৫১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ২ কেজি ৩শ গ্রাম গাঁজা, ৫ বোতল বিদেশি মদ, আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় ২১ হাজার শলাকা বিড়ি জব্দ করা হয়। এসব অভিযানে ১৪জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়।
জানা যায়, গত ৩জুলাই রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই (নিরস্ত্র) জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ পৌর এলাকার টিকরবাড়ি গ্রামে অভিযান চালায়। এসময় ৫০০গ্রাম গাজাসহ সুলেমান মিয়া (৫০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুলেমান মিয়া পৌরসভার টিকরবাড়ী এলাকার মৃত আব্দুস ছাত্তারের ছেলে। এঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা (মামলা নং-০৩/ ০৪/০৭/২০২০ইং) দায়ের করে।
গত ৮ জুলাই বিকেলে পুলিশ জানতে পারে যে জকিগঞ্জ থেকে সিলেট গামী রাস্তার দিয়ে সিএনজি করে একজন ব্যক্তি ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে যাচ্ছে। এসময় গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই মোঃ জুনেদ আহমদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ কদমতলীস্থ সিলেট -জকিগঞ্জ সড়কে চেকপোষ্ট করাকালীন ফারুক আহমদ (৩৫) কে ২০১ পিস ইয়াবাসহ আটক করেন। সে উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের রফিপুর গ্রামের আব্দুল হান্নানের পুত্র। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্র আইনে একটি মামলা (মামলা নং-০৭-তারিখ-০৮/০৭/২০২০ইং) দায়ের করেছে।
গত ১২ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ থানার এস আই আশীষ চন্দ্র তালুকদারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার লক্ষীপাশা ইউনিয়নের পুরকায়স্থ বাজার থেকে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে । এসময় আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় ২১ হাজার শলাকা নাসির বিড়ি ও নগদ ৪০ হাজার ১ শত টাকা সহ আবজাল হুসেন (৩৮) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ।
গত ১৩ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের টিকরপাড়া গ্রামে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একদ পুলিশ অভিযান চালায়। এসময় ইয়াবা বিক্রির সময় দুজন মাদক ব্যবসায়ীকে হাতে নাতে আটক করা হয়। এ সময় তাদের দেহ তল্লাশি করে ১০৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন- উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের টিকরপাড়া গ্রামের মৃত কুতুব আলীর পুত্র ইসলাম উদ্দিন (৫০), ময়মনসিংহের গৌরিপুর থানার ছিনচাপুর গ্রামের মো. আব্দুস সালামের পুত্র মো.নজরুল ইসলাম(৩৮), বর্তমানে সে পৌর এলাকার দাঁড়িপাতন গ্রামে বসবাস করছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা (মামলা নং-১৬, তারিখ-১৪-০৭-২০২০ইংরেজি) দায়ের করা হয়।
গত ১৭ জুলাই রাতে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই ফয়জুল করিমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ফুলবাড়ি ইউনিয়নের মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় এ ইউনিয়নের হাজীপুর এওলাটিকর গ্রামের নুর উদ্দিন’র কলোনীর সামনের পাকা রাস্তার থেকে মাদক ব্যবসায়ী মোঃ জসিম উদ্দিন (৩১) কে আটক করা হয়। এসময় তার শরীর তল্লায় করে ৩০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। আটককৃত জসিম উদ্দিন পৌরসভার দাড়িপাতন গ্রামের মৃত সোয়াব আলীর পুত্র। তার বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা (মামলা নং-২০, তারিখ-১৭/০৭/২০২০ খ্রিঃ) দায়ের করা হয়েছে।
১৮ জুলাই রাতে উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দত্তরাইল পুরাতন সরকারি হাসপাতালের কাছ থেকে ৫শ’ গ্রাম গাঁজাসহ কছন আলী (৫৭) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ। আটকৃত আসামী কছন আলী উপজেলার দত্তরাইল গ্রামের মৃত মখদ্দছ আলীর ছেলে। তার বিরুদ্ধেও পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে।
গত ২১ জুলাই রাত ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক খান জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালন করে। এসময় পৌর এলাকার রনকেলী গ্রাম থেকে মাদক সম্রাট জামিল আহমদ (৪২) কে গ্রেপ্তার করে । এসময় তার কাছ থেকে ৫১পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত জামিল আহমদ পৌরসভার রনকেলী উত্তর গ্রামের মৃত হারুনুর রশিদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা (নং-২৭/২১.০৭.২০২০) দায়ের করে।
গত ২৩ জুলাই রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই একলাছ মিয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের এওলাটিকর জামে মসজিদের পাশে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক থেকে আইনুদ্দীন নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ১০৪ পিস ইয়াবাসহ ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। আইনুদ্দীন উপজেলার মোল্লাগ্রাম এলাকার মৃত হারিছ আলীর পুত্র। তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা (মামলা নং-২৯, তারিখ-২৩-০৭-২০২০ইং) দায়ের করেছে।
২৪ জুলাই গোলাপগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ফয়জুল করিম এর নেতৃত্বে পুলিশ উপজেলার হেতিমগঞ্জ বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসায়ী দিলোয়ার হোসেন (৪২) কে গ্রেফতার করা হয়। সে হেতিমগঞ্জ পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে। এসময় তার কাছ থেকে ৫০০ (পাঁচশত) গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা (নং৩১/২৪.০৭.২০২০) দায়ের কর পুলিশ।
২৬ জুলাই রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এসআই জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসায়ী শরফ উদ্দিন (৪৫) কে আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ৩০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ।সে উপজেলার চন্দরপুর গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা (নং-৩৪, তারিখ-২৬/০৭/২০২০) দায়ের করা হয়েছে।
২৭ জুলাই রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাদেপাশা ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ৫ বোতল ভারতীয় মদসহ ২জনকে আটক করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। আটককৃতরা হল, উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নের বাগলা ছালিকোনা গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে রাজু মিয়া (৪৫) ও একই ইউনিয়নের মোল্লারচক গ্রামের ললাই মিয়ার ছেলে আল আমিন (১৯)। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা (মামলা নং-৩৫, তারিখ-২৮/০৭/২০২০ খ্রিঃ) দায়ের করা হয়।
১০ আগস্ট রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ বাঘায় অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে রোকসানা বেগম (১৮) কে ৫শ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করে। আটককৃত তরুণী বাঘা ইউনিয়নের খালপার গ্রামের শওকত আলীর স্ত্রী। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা (মামলা নং- ১৩, তারিখ- ১০/০৮/২০২০) দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে গত ১আগস্ট রাতে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে নিয়ে আসা বড় একটি মোবাইলের চালান জব্দ করে পুলিশ। এদিন রাতে একটি চক্র সিলেটের সীমান্তবর্তী তামাবিল থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে মোবাইল ফোনের একটি বড় চালান নিয়ে উপজেলার বাঘা ইউনিয়নে প্রবেশ করে। এসময় এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে চোরাকারবারিদের গাড়িটি বাঘার আব্দুল আহাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সামনে আটকিয়ে রাখা হয়। এসময় ৪ চোরাকারবারির সদস্য পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশকে অবগত করলে পুলিশ নোহা গাড়ি ও ৩১৬টি মোবাইল জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে।
পুলিশের জব্দকৃত নোহা গাড়ির মূল্য প্রায় সাড়ে ৭লক্ষ টাকা ও ভারত থেকে অবৈধ ভাবে আনা ৩১৬ টি মোবাইলের মূল্য প্রায় ৬১লক্ষ ৪০হাজার টাকা বলে জানায় পুলিশ। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশ একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং-০৪/০৩-০৮-২০২০ইংরেজি।
এছাড়াও উপজেলার কোনাচর বাজার ও ধারাবহর থেকে পৃথক দুটি অভিযান চালিয়ে জুয়া খেলার টাকা ও সরঞ্জাম সহ ১৩ জুয়াড়িকে আটক করা হয়।
গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, গোলাপগঞ্জ উপজেলাকে মাদকমুক্ত করতে পুলিশ এ অভিযান অব্যাহত রাখবে। গত দুইমাসের এমন সাফল্যে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী আমাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।
এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোলাপগঞ্জ সার্কেল) রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলাকে মাদকমুক্ত করতে জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাবেনা। তারা মনে করেছিলো করোনাকালে পুলিশ তাদের ভুলে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি