সব
উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ প্রাচীন রাজনৈতিক গণ-সংগঠনের নাম হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।শীঘ্রই জেলা-মহানগর-উপজেলা-পৌর শাখা সহ কমিটি গুলোতে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।তাই নিজের যোগ্যতম স্থান পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সাবেক ছাত্রনেতারা,এবং দলের মধ্যে সুবিধাভোগী সহ অনুপ্রবেশকারীরা দৌড়ে কম নয়।
১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্টা হওয়ার পর থেকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ও এগারো দফা আন্দোলন, ৭০’র নির্বাচন পরবর্তী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মোকাবেলা করেছে।
এমনকি ১৯৭১ বাংলাদেশ কে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মুজিব বাহিনী গঠন করে মহান মুক্তিযুদ্ধে জাপিয়ে পড়ে অতঃপর সতের হাজার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আত্মদানের বিনিময় বাংলাদেশ বিজয় লাভে ভূমিকা পালন করে। ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামান সহ তাঁর পরিবার কে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তন ঘটে যখন স্বাধীনতার মৌলিক চেতনাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় পাকিস্তানী ভাবধারার সামরিক শাসক গোষ্ঠী,তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ স্বাধীনতার চেতনায় ছিল আপোষহীন।
১৯৭৫-৯০ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৮৩ সালের শিক্ষা আন্দোলন এবং সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের দশ দফা রচনায় ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ৯০ সালের সামরিক শাসনের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীদের সামরিক শাসকের বুলেট অনেক তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।এমনকি ছাত্রলীগ অজস্র নেতা-কর্মীদের ভোরের আলো দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
৯৬’র ১৫ই ফেব্রুয়ারি বেগম জিয়ার প্রহসন মূলক নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে আত্মাহুতির মাধ্যমে সাধারণ জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৯৬-২০০১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল থাকা সত্বেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শিক্ষাঅধিকার, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বন্যার্তদের জন্য স্বেচ্ছাশ্রম, বৃক্ষরোপণ সহ দেশ গঠন মূলক কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করে।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি জয়লাভের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার, নির্যাতন অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ছাত্রলীগের মেধাবী নেতা-কর্মীদের। তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পরিক্ষিত নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে।জামাত-বিএনপি স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা চালালে প্রতিবাদী আন্দোলনেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পরিক্ষিত নেতা-কর্মীরা সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দেয়।
পরবর্তী সেনা সমর্থিত সরকার কতৃক বিশ্বরত্ন শেখ হাসিনা কে গ্রেফতার করে,প্রিয় নেত্রীর কারামুক্তি ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মুক্তির আন্দোলনে প্রথম সারিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।এরমধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা’র বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্রের ইতিহাস রচনা হয়েছে কিন্তু পরিক্ষিত মুজিব আদর্শ বুকে লালিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী প্রিয় নেত্রীর থেকে পিছু হটেনি প্রিয় নেত্রীর পাশে থেকেছে।
কিন্তু ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক তৎপরতা এবং ছন্দ কেনো যেন হারিয়ে ফেলতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী-সুবিধাভোগীদের স্থান হওয়ার কারনে তাদের বদৌলতে আওয়ামী লীগে ও সঙ্গ সহযোগী সংগঠন এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনেও অনুপ্রবেশ ঘটে।
ইতিমধ্যে আমাদের প্রিয় নেত্রী সহ দলের শীর্ষ নেতাদের নজরে পড়েছে যা দেশবাসী সহ বিশ্ববাসী অবলোকন করেছেন।আজকে আওয়ামী লীগে সুবিধাভোগীদের কারণে রাজপথের পরিক্ষিত নেতারা প্রায় অসহায়।এরকম পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আওয়ামী লীগ তার অতীত ঐতিহ্য হারাবে বলে দুঃসময়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী সহ আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের মন্তব্য।
তৃতীয় বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় নেতারা নিজের আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্যে দেখা গেছে গ্রুপ-উপগ্রুপের সৃষ্টি করে দলীয় পরিক্ষিত দুঃসময়ের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন ঘটনায় মামলা মকদ্দমায় জড়িয়ে তাদের ক্লিন ইমেজ কে বিনষ্ট করে দলের কার্যক্রম থেকে প্রায় দূরে সরিয়ে রাখারও নজির রয়েছে।বিবদমান বিরোধে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত এবং নিহত’র সংবাদ প্রায় জাতীয় সহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।এতে করে আওয়ামী লীগ হয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রতিপক্ষ আর অভিমান করে দূরে সরে যাচ্ছেন প্রকৃত মুজিব আদর্শের সৈনিক।যা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ঘটেনি।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের অনেকেরই অভিমত – এরকম অবস্থায় দলের নেতৃত্ব চলতে থাকলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা’র ভিশন-২০৪১ রূপকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারবে না।তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বিশ্বনেত্রীর রূপকল্প বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সকল জেলা-মহানগর উপজেলা-পৌর শাখা সহ ইউনিয়নে আগামী পূর্ণাঙ্গ কমিটি গুলোতে অনুপ্রবেশকারী এবং সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে দলের দুঃসময়ের পরিক্ষিত নেতা-কর্মীদের যথার্থ মূল্যায়ন করা হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা’র রূপকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
কামাল উদ্দিন
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সহ-সভাপতি,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,সিলেট মহানগর।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি