সব
১.
থমকে আছে সময় । অদ্ভুত এক আঁধার ঘিরে ধরেছে চারদিক । অদৃশ্য এক ঘাতক তছনছ করে দিয়েছে আমাদের যাপিত জীবনের যাবতীয় স্বাভাবিকতা। অসহায় হয়ে পড়েছে মানুষ। পুরো পৃথিবী থমকে আছে। এই দুর্দিনে নতুন কিছু শব্দের সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি। শব্দগুলো মানব সভ্যতার সাথে কোনভাবেই যুতসই যাচ্ছে না। লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, সোশ্যাল ডিস্টেন্স, আইসোলেশ – শব্দগুলো মানব সভ্যতার সাথে বড্ড বেরসিক হলেও আমরা করুন বাস্তবতার কাছে জিম্মি হয়ে পরেছি। বিশ্বযুদ্ধ পরিবেশেও মানুষ এতো বিচ্ছিন্ন হয়না। আজ পুরো পৃথিবী বিচ্ছিন্ন। মানুষের আজ চরম দুর্দিন।
২
এই দুর্দিনে একটি ডায়রি হাতে নিয়েছি আমরা। আমরা মানে একদল স্বপ্নবাজ তরুণ। “সিলেট ডায়রি”- যেখানে আমরা প্রতিদিনের সিলেটকে তোলে আনবো। লিখে যাবো সুখ দুঃখের উপাখ্যান। এই লকডাউন সময়ে মানুষের কাছে খবর পৌঁছে দিতে অসম এক যুদ্ধে নেমেছেন সংবাদকর্মীরা। অদৃশ্য ঘাতকের আঘাতে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সম্মুখ যুদ্ধ করে যাচ্ছেন অনেক সংবাদকর্মী। ইতোমধ্যে একাধিক বার্তাকক্ষে হানা দিয়েছে কালান্তক ব্যাধি করোনা। কয়েকজন সংবাদকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। যে কারণে অনেক সংবাদ প্রতিষ্ঠান লকডাউনে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ থেমে নেই। একেকজন সংবাদকর্মীর বসতঘর একেকটি বার্তাকক্ষ হয়ে গেছে। যে যার অবস্থাানে থেকে সংবাদ করে যাচ্ছেন, সার্বিক পরিস্থিাতির সঠিক খবরটি মানুষের ধারে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই যুদ্ধের সময়ে, কঠিন এই করোনাকালে আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মানুষের পাশে থাকবো।
৩.
দেশে সংবাদ শিল্পের বিকাশ ঘটেছে বহু আগে।
নব্বইয়ের দশকে আজকের কাগজ এসে সংবাদপত্রের ইতিহাসে আধুনিক ধারার যে বিকাশ ঘটিয়েছিলো। ভোরের কাগজ হয়ে প্রথম আলোতে এসে তা শিল্পে রূপ নিয়েছে। দেশে এখন ছোট বড় অনেকগুলি গণমাধ্যম। সাংবাদিকতার পরিসরও অনেক বেড়েছে। সংবাদের বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্য এসেছে। নানা ধরনের নিরীক্ষা যোগ হয়েছে। কিন্তু এ সব কিছু ছাপিয়ে সংবাদের ধারায় বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে মুক্ত ইন্টারনেট। মুক্ত এই সময়ে সাংবাদিকতা তাই দিক বদলেছে। নিউজ প্রিন্টের ছাপা অক্ষর প্রযুক্তির সময়ে এসে মুঠোফোনের আঙুলের তলায় গিয়ে ঠেকেছে। এখন এক ক্লিকেই সব খবর পড়া যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকের সুবাদে সব শ্রেণির মানুষই এখন খবরের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারছেন সহজে। আগের তুলনায় সাংবাদিকতার মানও বেড়েছে অনেকগুন। এর পরও সংবাদ শিল্প নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে চলেছে।
চ্যালেঞ্জ অনেক। প্রযুক্তির ছোঁয়া একদিকে যেমন গণমাধ্যমের ক্রমবিকাশ দ্র“ত ঘটাচ্ছে, তেমনি নিউজ প্রিন্টের জন্য বৈরী পরিবেশও তৈরী করছে। মুক্ত ইন্টারনেটে ভুঁইফোড় আর অশুদ্ধ সাংবাদিকতাও যন্ত্রণা দিচ্ছে বেশ। প্রতিদিন নতুন নতুন মানহীন ওয়েব পত্রিকা ভাসছে ইন্টারনেটে। তবে আশার কথা হলো সাময়িক যন্ত্রণা দিলেও সততা, বস্তুনিষ্ঠতা আর পেশাদারিত্বের অভাবে এরা ঠিকতে পারছেনা। সকালে উদয় হয়ে বিকেলেই অস্ত যাচ্ছে।
৪.
নতুন প্রজন্ম এখন যন্ত্র নির্ভর। ইন্টারনেটের প্রসারে তাদের মুঠোফোনেই এখন বিশ্ব সংযোগ করে নিয়েছে। পুরো বিশ্বের গণমাধ্যম তাদের সামনে উন্মুক্ত। তারা চাইলেই একটি সংবাদের পাঠ শেষে মতামত কিংবা বিশ্লেষণ করে নিতে পারছে সহজেই। আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকেও যা ছিলো কল্পনাতীত।
কাগজের মুদ্রণ থেকে ডিজিটাল প্রশাখায় রূপান্তরিত হয়ে সাংবাদিকতার পরিসর যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে কনটেন্টও। অনেকটাই উন্মুক্ত পরিবেশে বুদ্ধিজীবী বা ফ্রিল্যান্স রাইটার, যাঁরা নিজেরা কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে লিখতে পছন্দ করেন, ব্যাপকভাবে তাঁরা ওয়েব কাগজে লিখতে শুরু করেছেন। নানা ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, সুধীসমাজের অনেকেও লেখালেখিতে আগ্রহী হচ্ছেন। তরুণরাও লিখছেন। ফলে সাংবাদিকতা বহুমাত্রিকতা পাচ্ছে। ওয়েব ভার্সন হওয়ায় ফেসবুকে সেসবের রিফ্লেকশনও পাওয়া যাচ্ছে দ্র“ত । এতে মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তার স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে সাংবাদিকতার বিষয়বস্তু নিত্যনতুন পরীক্ষণের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন ।
উন্মুক্ত সময়ের এই সুযোগগুলোকেই আমরা কাজে লাগাতে চাই। সিলেট ডায়রিতে নতুন কনটেন্ট যোগ করতে চাই। তরুণ মনের লেখার আকাঙ্ক্ষা, নতুন বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর নানা মাত্রায় সাজাতে চাই ‘সিলেট ডায়রি’। আমাদের সাথে থাকুন প্রিয় পাঠক, সুহৃদ সিলেটবাসী।
আমিনুল ইসলাম রোকন
সম্পাদক – সিলেট ডায়রি।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি