ট্রলার ডুবিতে ৩ মাসে ৩৪ জন নিহত

এম এম এ রেজা পহেল,ধর্মপাশা;
  • প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১:৫১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা হাওরে চলতি বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে নৌ দুর্ঘটনায় ৩৪ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। চলতি বছর জুলাই-আগষ্ট মাসে ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও ছাতক উপজেলায় নৌকা ডুবে প্রায় ৫ জনের প্রাণ হারান। এদের মধ্যে ৩ জন তাহিরপুর উপজেলার। এছাড়াও ৫ আগস্ট নেত্রকোনার মদন উপজেলায় হাওরে নৌকা ডুবে ১৭ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানী ঘটেছে। ৯ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার মধ্যবর্তী গুমাইনদীতে নৌকা ডুবির ঘটনায় ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের ইনাতনগর গ্রামের ৯জন, পাইকুরাটি ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের ২ জন ও নেত্রকোনার মেদনী গ্রামের বাসিন্দা ।

এলাকাবাসি মনে করেন, নৌ যোগাযোগে অব্যবস্থাপনার কারণে প্রায়ই নৌকা ডুবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। গত বুধবার সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থেকে ঠাকুরাকোনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী ট্রলার কলমাকান্দা উপজেলার বরখাপন ইউনিয়নের রাজনগর গ্রাম সংলগ্ন গুমাই নদীতে যাওয়া মাত্রই একটি বাল্কহেড নৌকার মুখোমুখী সংঘর্ষে মর্মান্তিক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। প্রথমে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করে পরে শুক্রবার বিকেল আরো ২ লাশ উদ্ধার করা হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার হাওর এলাকার বিভিন্ন উপজেলায় সারা বছর চলাচলের জন্য উন্নত সড়কপথ নেই। যেগুলো রয়েছে, সেগুলোতেও নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বেশিরভাগ সড়ক ৬-৭ মাস পানির নীচে তলিয়ে থাকে। এসব সড়কে বর্ষায় সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় কাজে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে, বিয়েশাদী, হাট-বাজার, ইউনিয়ন ও উপজেলায় নৌপথে চলাচল করেন ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলার দিয়ে। হাওরে বসবাসকারী লোকজন মনে করেন, সড়কপথে পরিবহন চলাচল করার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি থাকলেও নৌপথে চলাচলে কোন নিয়মনীতি নেই। একারণে ট্রলার বা নৌকা চালকরা নিজের ইচ্ছামত অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে চলাচল করেন। এ কারণেও নৌ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। নৌপথে এরকম দুর্ঘটনারোধ করতে ট্রলার বা নৌকার, যাত্রী ধারণ ক্ষমতা, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট নিশ্চত করে দেওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক নৌঘাট থেকে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি যাত্রী সুরক্ষার জন্য নিয়ম-নীতি প্রণয়ন করা জরুরী। না হয় নৌপথে প্রাণহানীর ঘটনারোধ করা সম্ভব নয়।

এ দিকে এ দিকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে নৌপথে চলাচলকারী নৌযানসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট সর্বসাধারণকে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান মেনে চলার নির্দেশনা জারি করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। শনিবার সন্ধ্যার পর এক গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৪ দফা নির্দেশাবলী মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে বলা হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ ও বাংলাদেশ বাণিজ্যিক নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এবং প্রচলিত আইন ও বিধি মোতাবেক মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।

উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও মধ্যনগর বাজার ট্রলারচালক সমিতির সভাপতি আরশাদ মিয়া বলেন, ‘বুধবার সকালে ট্রলারডুবির ঘটনায় আমি নিজেও স্বজনহারা হয়েছি। কীভাবে যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই বিষয়টি নিয়ে ট্রলারচালকদের সঙ্গে কথা বলেছি।

মধ্যনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদার বলেন, ‘অদক্ষ চালক আর লোহার তৈরি হওয়ায় সহজেই ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে নিরাপত্তামূলক কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রাণহানি ঘটেছে। প্রতিটি যাত্রীবাহী ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট রাখা বাধ্যতামূলক করা উচিত।’

মধ্যনগর থানা যুবলীগের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমার একেবারেই হাওর এলাকার মানুষ। হাওরের বৈরী আবহাওয়ার সাথে যুদ্ধ করেই বড় হয়েছি। নৌ পথে চলাচলে কোন নিয়ম নীতি মানা হয়না। চালক ও যাত্রীরা সচেতন হলেই নৌদুর্ঘটনা অনেকটা রোধ করা সম্ভব। নৌ দুর্ঘটনা বন্ধ করতে চাইলে মেরিন নীতিমালায় হাওরের চলচলকারী সকল ধরনের নৌকা-ট্রলার যান কে নিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে সচেতনতাও বাড়াতে হবে।

ধর্মপাশা উপজেলার প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক মানবজমিন প্রত্রিকার প্রতিনিধি মো. ইসহাক মিয়া বলেন, সড়ক পথের মত নৌপথে নিয়ম-নীতির দরকার। স্থানীয় সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিয়ম- নীতি প্রণয়ন করবেন। যেসকল নৌকা চালক এসব মানবেন না তাদেরকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক এবং সহকারী দ্বারা নৌযান চালনা নিশ্চিত করতে হবে। সাইরেন ও সার্চ লাইট/সিগনাল লাইট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, মালবাহী নৌযানে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত মালামাল পরিবহন করা যাবে না।
নৌযান চালকের দক্ষতা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার সনদ গ্রহণ করতে এবং তা নৌযান চালনাকালে সংরক্ষণ করতে হবে। আবহাওয়া পূর্বাভাস মেনে নৌযান চলাচল করতে হবে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নৌযান চালনা হতে বিরত থাকতে হবে । সকল প্রকার সংঘর্ষ ও দুর্ঘটনা এড়িয়ে নৌযান চালনা করতে হবে, কোনোভাবেই ধারণ ক্ষমতার অধিক যাত্রী/মালামাল বা পণ্য পরিবহন করা যাবে না। এ ছাড়াও বিধি-বিধান ও সরকার কর্তৃক জারিকৃত অন্যান্য আদেশ-নির্দেশ মেনে নৌযান পরিচালনা করতে হবে।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি