সব
জীবিত বোনকে অবিবাহিত ও মৃত দেখিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করছেন দুই ভাইসহ সহযোগীরা। সম্পত্তি লোভে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে নির্যাতন করে অপর বোনকে বাড়ি ছাড়া করে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলেও ভাড়াটে সন্ত্রাসী কর্তৃক হামলার স্বীকার হচ্ছেন গ্রামের অনেকেই। সন্ত্রাসীদের হুমকিতে নিরাপত্ত্বাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগীরা।
রোববার (১২ জুলাই) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়নের হামতনপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আহাদ ওরফে ফটিক মিয়ার স্ত্রী ও মৃত আফতাব মিয়ার মেয়ে দলা বেগম রেজিয়া। তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য রাখেন আনছর মিয়া।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্বামী নেই, একমাত্র ছেলেও প্রবাসে। তারা ৪ বোন, দুই ভাই। ভাই বশির মিয়া ও নজির মিয়া এবং দুই বোন যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। বয়োবৃদ্ধ মা যুক্তরাজ্যে বোনদের কাছেই থাকেন। রেজিয়াসহ তার মা ও বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে গ্রামের সাইস্তা মিয়ার ছেলে অস্ত্র ব্যবসায়ী মতিউর রহমানের ভাইয়েরা নানা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। সন্ত্রাসী মতিউর ২০০৯ সালের ১৪সেপ্টেম্বরে গোয়ালাবাজারে অস্ত্র বিক্রয়কালে অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে আটক হয়। ২০১৮ সালের দুটি এবং ২০১৫ সালে দায়ের করা একটি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী ছিল সে। থানায় সে নিজেকে যুবলীগ নেতা ও স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীর পরিচয় দিয়ে তুলে গভীর সখ্যতা। পুলিশ সদস্যদের সাথে তার গভীর সখ্যতাকে পুঁজি করে অস্ত্র ব্যবসার পাশাপাশি ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে এলাকায় বীরদর্পে চালাচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। মতিউরের ইন্ধনে রেজিয়াসহ তারা ৪ বোন ও মা’র নাম বাদ দিয়ে ২০১৮সালের ১০ জানুয়ারি উমরপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার উত্তরাধিকারী সনদ সংগ্রহ করেন রেজিয়ার ভাই বশির মিয়া ও নজির মিয়া। বশির মিয়া ও নজির মিয়ার নামে সংগ্রহ করা আরেকটি উত্তরাধিকারী সনদে তাদের বোন লায়লা বেগমকে ‘মৃত ও অবিবাহিত’ উল্লেখ করা হয়। সেই বোনটি পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও সম্পত্তির লোভে তার ভাইয়েরা জালিয়াত চক্র মতিউরের মাধ্যমে জীবিত বোনকে মৃত বলে পরিচয় দেয়। ভুয়া সনদ সংগ্রহে সহযোগিতা করেছেন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আশা রাণী সূত্রধর।
জালিয়াতির উত্তরাধিকারী সনদ ব্যবহার করে বেশ কিছু ভূ-সম্পত্তি বশির ও নজিরের নামে নামজারী করিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া ওয়ার্ড সদস্য বিষয়টি জানতে পেরে আফতাব মিয়ার সকল উত্তরাধিকারীর নাম উল্লেখ পূর্বক রেজিয়া বেগমকে পূর্ণাঙ্গ উত্তরাধিকারী সনদ প্রদান করলে নামজারী বাতিলের দাবিতে তিনি সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবরে আপত্তিপত্র (আপলি) দাখিল করেন। জালিয়াতি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনায় রেজিয়া বাদি হয়ে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বশির মিয়া, নজির মিয়া, মতিউর রহমান ও ইউপি সদস্য আশা রাণী সূত্রধরকে অভিযুক্ত করে সিলেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন রয়েছে। বিগত দুই বছরে মতিউর জোর পূর্বক রেজিয়ার পিতার নামে থাকা বাজার এলাকার বাসা-দোকান ভাড়া, জমির ধান, বাড়ির গাছ ও পুকুরের মাছ বিক্রয়সহ প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। প্রাণনাশের হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করে মতিউর তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও নিরাপদ নন তিনি। মতিউরের ভয়ে রেজিয়ার মা ও দুই বোনরা দেশে আসতে পারছেন না।
অন্যায় কর্মকান্ড নিয়ে কথা বলায় গ্রামের আনছর মিয়াকে পিটিয়ে আহত করে মতিউর ও তার পিতা। মতিউরের কর্মকান্ড এলাকায় বিচার না পেয়ে উল্টো থানা পুলিশের কথিপয় পুলিশ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে গ্রামের নিরিহ লোকজনের নামে থানায় জিডি করে। জিডির তদন্তে ওই পুলিশ কর্মকর্তা গ্রামে গেলে গ্রামবাসীরা মতিউরের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিষয়টি তুলে ধরেন। কিন্তু ওই পুলিশ কর্মকর্তা গ্রামবাসীর কথা না শুনে মতিউরের পক্ষ নিয়ে গ্রামবাসীকে উল্টো শাষান। একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন আচরণে গ্রামবাসী হতাশ হয়েছেন। এ ব্যাপারে ৯ জুলাই রেজিয়া বেগম প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষায় সন্ত্রাসী মতিউরের নির্যাতনের হাত থেকে তিনিসহ গ্রামের লোকজনকে রক্ষার স্বার্থে দ্রুত অস্ত্র ব্যবসায়ী মতিউরসহ তার সহযোগী দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি