জাফলংয়ে প্রবেশ ফি বন্ধে মন্ত্রী ইমরানের চিঠি ডিসিকে

সিলেট ডায়রি ডেস্ক;
  • প্রকাশিত: ১০ মে ২০২২, ৭:৩২ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৩ বছর আগে

সিলেটের গোয়ানঘাটের জাফলং পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের কাছ থেকে প্রবেশ ফি আদায় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন ওই এলাকার সাংসদ এবং প্রবাসীকল্যান ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।

মঙ্গলবার সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে এই চিঠিতে তিনি এই অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন- ‘জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক পর্যটনস্পট সমূহের প্রবেশ ফি নির্ধারণ, আদায় এবং আদায়কৃত অর্থ ব্যবহার সংক্রান্ত কোন আইনানুগ বিধান জারি হয়েছে কি না তা জানা প্রৃয়োজন’।

প্রবাসীকল্যান মন্ত্রীর চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, উনার একটি চিঠি আমি পেয়েছি। তার চিঠি পাওয়ার আগেই জাফলং থেকে প্রবেশ ফি আদায় বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির পরবর্তী বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত প্রবেশ ফি আদায় বন্ধ থাকবে।

পর্যটন উন্নয়ন কমিটির পরবর্তী বৈঠক কবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি এখনও নির্ধারণ হয়নি। তারিখ নির্ধারণ হলে আপনাদের জানানো হবে।

সিলেটের অন্যতম পর্যটন এলাকা গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং। জাফলংকে বলা হয় প্রকৃতি কন্যা। সবসময়ই জাফলংয়ে পর্যটককদের ভিড় লেগে থাকে। আগে এখানে বিনামূল্যে পর্যটকরা প্রবেশ করতে পারলেও গত বছর থেকে ১০ টাকা প্রবেশ ফি চালু করে উপজেলা প্রশাসন। একটি উন্মু নদী ও পাহাড় দেখার জন্য প্রবেশ আদায়ের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষত গত ৫ মে জাফলংয়ের টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা পর্যটকদের মারধরের পর এনিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পর্যটন মন্ত্রণালয় নির্ধারিত কার্যপরিধির বাইরে গিয়ে সিলেটর গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটক প্রবেশে ফি নির্ধারণ করে জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটি। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের বাইরে গিয়ে এভাবে ফি নির্ধারনকে অবৈধ ও এখতিয়ার বর্হিভ’ত বলছেন আইনবিশেষজ্ঞরাও।

মঙ্গলবার সিলেট-৪ জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ) এলাকার সাংসদ এবং প্রবাসী কল্যান ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী সাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৫ এপ্রিল বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সিলেটের জাফলং এ প্রবেশ ফি আদায়কে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছোসেবক ও পর্যটকদের মধ্যে এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারির দৃশ্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যা সিলেটের পর্যটনস্পটগুলো সম্পর্কে ভ্রমণ পিপাসুদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এরফলে দেশে ও বিদেশে এলাকার ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে, যা কখনোই কাম্য নয়। তাছাড়া জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক পর্যটনস্পট সমূহের প্রবেশ ফি নির্ধারণ, আদায় এবং আদায়কৃত অর্থ ব্যবহার সংক্রান্ত কোন আইনানুগ বিধান জারি হয়েছে কি না তা জানা প্রয়োজন।

চিঠিতে ইমরান আহমদ আরও উল্লেখ করেন, ‘জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক পর্যটনস্পট সমূহের প্রবেশ ফি নির্ধারণ, আদায় এবং আদায়কৃত অর্থ ব্যবহার সংক্রান্ত নীতিমালা/বিধিবিধান নিম্নসাক্ষরকারীকে জরুরী ভিত্তিতে অবহিত করতঃ আমার নির্বাচনী এলাকার পর্যটনস্পট সমূহের (রাতারগুল ব্যতীত) পর্যটক প্রবেশ ফি সাময়িকভাবে বন্ধ করণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। পরবর্তীতে সংশ্লিস্ট সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করে সময়োপোযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

জানা যায়, ২০২০ সালের ৩নভেম্বরর তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সিলেট জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির এক সভায় জাফলংয়ে ১০ টাকা হারে প্রবেশ ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।

তবে এরপরের বছর ২০২১ সালে ৮ নভেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব শ্যামলী নবী সাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে দেশের জেলাভিত্তিক পর্যটন উন্নয়ন কমিটি পুণর্গঠন করা হয়। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপনে পর্যটন উন্নয়ন কমিটির জন্য ১৩ টি কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই কার্য পরিধির কোথাও প্রবেশ ফি আদায়ের কথা উল্লেখ নেই। তারপরও গতবছর থেকে জাফলংয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে প্রবেশ ফি আদায় শুরু হয়।

জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির ওই সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়- ‘প্রবেশ ফি-এর আদায়কৃত অর্থ থেকে প্রয়োজনীয় জনবলের বেতন ও আনুষাঙ্ঘিক খরচ বহন করা হবে। সঞ্চিত অর্থ দিয়ে পরবর্তীতে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।’ এবং ‘জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পর্যটনসংশ্লিস্ট ফান্ড গঠনের জন্য একটি ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে’।

জাফলংয়ে প্রবেশ ফি চালুর ব্যবপারে ছন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাহমিলুর রহমান জানান, ২০২১ সালে ৮ নভেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপনের আলোকেই ফি চালু করা হয়েছে।

তবে ওই প্রজ্ঞাপন ঘেঁটে দেখা গেছে, পর্যটন উন্নয়ন কমিটিকে ১৩ কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এতে কোথাও ফি নির্ধারণ বা আদায়ের কথা উল্লেখ নেই।

প্রজ্ঞপনে উল্লেখ তাদের নির্ধারিত কাজের মধ্যে রয়েছে- জেলার পর্যটন আকর্ষন চিহ্নিতকরণ ও উন্নয়ন ও সংরক্ষণ। পর্যটন আকর্ষনীয় স্থানের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ। পর্যটন আকর্ষনীয় স্থানে পর্যটকদের যাতায়াত ও অবস্থানের স্বাচ্ছন্দ বিধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। বিদেশী পর্যটকদের জন্য বিশেষ এলাকা নির্ধারণের প্রয়োজন ও অবকাশ থাকলে সেরুপ এলাকা নির্ধারণের জন্য সরকারের নিকট প্রস্তাব প্রেরণ। বিদেশি পর্যটকগণের বাংলাদেরেশ ভ্রমণ ও অবস্থানকে নিরাপদ ও আরামদায়ক করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ পর্যটন স্থানসমূহের উন্নয়নের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ পেশ। জেলার পর্যটন উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক গঠিত ভলান্টিয়ারগণের কাজের সমন্বয়। উপজেলা সমূহের পর্যটন উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা তদারকি। বিশ্ব পর্যটন দিবস পালনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। পর্যটন উন্নয়ন ও প্রচার সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সাথে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা ও পর্যটন উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের অন্যান্য নির্দেশনা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদদুল ইসলাম শাহীন বলেন, প্রজ্ঞাপনের কার্য পরিধিতে থাকা থাকা সত্ত্বেও পর্যটন উন্নয়ন কমিটির এভাবে ফি আদায় সম্পূর্ণ অবৈধ ও এখতিয়ার বর্হিভূত। তারা এটা করতে পারেন না। মন্ত্রণালয় নির্ধারিত কর্মপরিধির মধ্যেই তাদের থাকতে হবে।

প্রবেশ ফি চালুর পর টিকিটি বিক্রির জন্য জাফলংয়ে বসানো হয় একাধিক টিকিট কাউন্টার। প্রতি দর্শনার্থীর কাছ থেকে ১০ টাকা হারে এই ফি আদায় করে উপজেলা প্রশাসন। ফি আদায়ের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে কিছু কর্মী নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসনের এই কর্মী নিয়োগের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপনের নির্ধারিত কার্যপরিধির সাত নাম্বারে উল্লেখ আছে- ‘বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক গঠিত ভলান্টিয়ারগণের কাজের সমন্বয় করবে পর্যটন উন্নয়ন কমিটি।’

এই কর্মীদের কয়েকজনই গত ৫ দুপুরে টিকিট কাটা নিয়ে কথাকাটাকাটির জেরে মারধর করে একদল পর্যটককে। তাদের হাতে লাঞ্চিত হন নারী পর্যটকরা।

পর্যটকদের উপর হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এনিয়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি