সব
সিলেটের জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলাকারী ৫ জনকে আদালতে প্রেরণ করা হলে তাদের কারাগারে প্রেরণ করেছেন বিচারক। শুক্রবার (৬ মে) দুপুরে তাদের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন বিচারক।
বিষয়টি শুক্রবার বিকেলে সিলেট জর্জ কোর্টের পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সিলেটের জাফলংয়ে বেড়াতে আসেন ঢাকার কদমতলী থানার জুরাইন শ্যামনগর এলাকার সুমন সরকারের পরিবার। এ দলে ছিলেন ৮ নারী ও শিশুসহ ১২ জন। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে কাউন্টারে এক শিশুর টিকিট কেনাকে কেন্দ্র করে কাউন্টারের স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে কাউন্টারে থাকা উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক লাঠি, কাঠের টুকরো ও লোহার পাইপ দিয়ে পর্যটকদের বেধড়রক মারধর শুরু করেন। তখন পাশে থাকা এক তরুণী ও কোলে থাকা শিশুবাচ্চা নিয়ে এক নারী হামলা থামানোর চেষ্টা করলে তারাও হামলার শিকার হন। এ সময় নারীদের শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন হামলার শিকার পর্যটকরা। হামলায় ৬ নারী-পুরুষ আহত হন। পরে তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ঘটনার দিন রাতেই হামলার শিকার পর্যটকরা ঢাকায় ফেরেন। এরআগে গোয়াইনঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন সুমন সরকার নামের ওই পর্যটক।
ঘটনার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনার ভিডিও এবং ছবি মুঠোফোনে ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে বিকেল ৫টার দিকে উপজেলা প্রশাসন ও জাফলং সাব জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক ঘটনাস্থলে যান। পরে হামলাকারী ৫ স্বেচ্ছাসেবককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ। তারা হলেন- গোয়াইঘাটের পন্নগ্রামের মৃত রাখা চন্দ্রের পুত্র লক্ষ্মণ চন্দ্র দাস, ইসলামপুর গ্রামের বাবুল মিয়ার পুত্র মো. সেলিম আহমেদ, নয়াবস্তি এলাকার ইউসুফ মিয়ার পুত্র সোহেল রানা, পশ্চিম কালীনগর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের পুত্র নাজিম উদ্দিন, ইসলামপুর রাধানগর গ্রামে মৃত সিরাজ উদ্দীনের পুত্র জয়নাল আবেদীন।
হামলার শিকার পর্যটকরা অভিযোগ করেছেন- ঘটনার সময় জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেও সহায়তা পাননি তারা। বৃহস্পতিবার রাতে জাফলং গ্রিন রিসোর্টের সামনে ভুক্তভোগী পর্যটকরা তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন গণমাধ্যর্মীদের কাছে। এসময় তারা বলেন, হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচতে ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়। পুলিশ হামলার ছবি মুঠোফোনে তুলে পাঠানোর কথা বলে। পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। তবে হামলার ঘটনার ভিডিও ফেসবুক ও অনলাইন গণমাধ্যমের মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিকেলে পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ৫ জনকে আটক করে।
মামলার বাদি পর্যটক সম্রাট সরকার বলেন, টিকিট ছাড়া পর্যটন কেন্দ্রে ঢোকা যাবে না বলেই নারীদের শরীরে হাত দেয় হামলাকারী স্বেচ্ছাসেবকরা। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা নারী-পুরুষদের উপর হামলা করে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকরা। তিনি বলেন, আমরা ঘটনার পর পরই ৯৯৯-এ কল করে সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। আমাদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে জানালে ৯৯৯-এর ফোন রিসিভকারী পুলিশ মাথা ফাটানোর ছবি পাঠাতে বলেন।
হামলায় তাদের অনেকে আহত হলেও মামলার বাদি সুমনের অবস্থা গুরুতর জানিয়ে সম্রাট বলেন, তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। এখানে কোনো হাসপাতাল তাকে ভর্তি করতে চান না। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
হামলার শিকার বিথি সরকার বলেন, আমরা মেয়ে হয়েও হামলাকরীদের আটকাতে চেষ্টা করি। হামলার সময় তাদের একটাই কথা ছিলো- ‘মেরেই ফেলবো’। আমাদের জামা-কাপড় খুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে হামলাকারী। পশুর মতো আচরণ করেছে তারা।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম জানান, হামলায় আহত সুমন সরকার বাদি হয়ে ৫ জনের নাম উল্লে করে অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা (নং-০৮(৫)২২) দায়ের করেছেন। গ্রেফতারকৃত ৫ জনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে থেকেই জাফলং এলাকায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিলো। এবার নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি