চুনারুঘাটে ৬ পয়েন্টে আসছে চোরাচালান

সিলেট ডায়রি ডেস্ক ;
  • প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২০, ৫:৩২ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানা পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণার পরও উপজেলায় থামছে না মাদক ব্যবসা। নানা কৌশলে পাচার হচ্ছে মাদক। উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চিমটিবিল খাস ও গাজীপুর ইউনিয়নের টেকেরঘাট, গোবরখলা ও সাদ্দাম বাজার এলাকার ১০ জন প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে দমানো যেন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সীমান্তের ৬টি পয়েন্ট দিয়ে তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে গাঁজা, চা পাতা ও ভারতীয় গরু।
সীমান্ত এলাকা ঘুরে মাদক ব্যবসার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। উপজেলার গাজীপুর ইউয়িনের টেকেরঘাট গ্রামের পাশেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ঘোষপাড়া ও কুলিবাড়ি গ্রাম। মোকামঘাটের ওপারে খোয়াইচর। তারপর ত্রিপুরার দূর্গানগর গ্রাম। মুলত ত্রিপুরার দুর্গানগর, কুলিবাড়ি, ঘোষপাড়া, প্রহড়মুড়া, টেংড়াবাড়ি, বগাবিল দিয়েই চোরাচালন ভারত থেকে দেশে আসে।
ভারত সরকার ২০০৫ সালে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করে। কিন্তু চোরাচালান, অবৈধ লোকজনের যাতায়াত এখনো বন্ধ করতে পারেনি। চোরাকারবারীরা কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁক দিয়ে ও পাহাড়ী ছড়া দিয়ে চোরাচালান পাঁচার করছে।
বাংলাদেশী শ্রমিকরা বেশি টাকা রোজগারের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে অবৈধ মালামাল আনতে ভারতে চলে যায়। এধরনের ঝুঁকি নিতে গিয়ে বিগত সময়ে অনেকে বিএসএফ’র গুলিতে প্রাণ হারিছে।
একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চিমটিবিল গ্রামের একসময়ের গরু চোর মামদ আলী ও তার ছেলে সিপন মিয়া বিজিবি’র সোর্স পরিচয়ে মাদক ও ভারতীয় চোরাই গরুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিপন মিয়া বিজিবি’র পোষাকের আড়ালে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ও গরুর ব্যবসা। সিপন এলাকার মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তালিকাভুক্ত। শুধু তাই নয়, সিপন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুলিশ ও বিজিবি’র নামে মোটা অংকের বখরা নিয়ে মাদকের চালান পৌছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট আড়তে। তিনি বিজিবি’র পোষাক পরিহিত থাকার কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে সাহস পান না। কেউ প্রতিবাদ করলে বিজিবি দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকী দেন তিনি।
গাজীপুর ইউনিয়নের সাদ্দাম বাজার এলাকার বেশ ক’জন মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরও থামছে না মাদক ব্যবসা। তারা চিমটিবিলের সিপনকে সাপ্তাহিক বখরা দিয়ে মাদকের ব্যবসা করে যাচ্ছেন। মাদক ব্যবসার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে সিপন। আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের ক’জন প্রভাবশালী কথিত রাজনৈতিক কর্মীর ছত্রছায়ায় থেকে সিপন ধরাকে সরা জ্ঞান করছে।
এদিকে, টেকেরঘাট গ্রামের শহীদ নিজেকে যুবনেতা পরিচয় দিয়ে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই এলাকার জলিলও মাদক পাচারকারী। জলিল নিজেকে বিজিবি’র সোর্স পরিচয় দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বখরা তুলেন। গোবরখলা গ্রামের শাহীন দীর্ঘদিন যাবৎ মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত থাকলেও তিনি সব সময় থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে তিনি মাদক ব্যবসা চালাচ্ছেন।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার চিমটিবিল সীমান্তের ১৯৭১নং পিলারের কাছে ‘বেলজিয়াম’, ১৯৭৩ নং পিলারের কাছে ‘শ্বশান’, ১৯৭৪ নং পিলারের কাছে ‘সুতাং ছড়া’, ১৯৭২ নং পিলারের কাছে ‘পাঁচচোঙ্গা টিলা’, ১৯৭৩ নং পিলারের মাঝামাঝি ‘বেলজিয়াম ভাঙ্গা’ এবং ১৯৭৫ নং সীমান্ত পিলারের সন্নিকটে মাকড়া ছড়া নামক স্থান দিয়ে প্রতিদিন আসছে গাঁজা, চা পাতা ও ভারতীয় গরু। প্রতি গরুর জন্য সিপনকে ১ হাজার টাকা দিতে হয় গরু ব্যবসায়ীদের। এরপর ওই গরু স্থানীয় ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে চলে যায় স্থানীয় বাজারগুলোতে। কোনো কোনো সময় চা বাগান ঘেরা নির্জন স্থানগুলোতে ট্রাক বোঝাই হয়ে চলে যায় নির্দিষ্ট স্থানে।
গাজীপুর ইউনিয়নের দুধপাতিল, বড়ক্ষের, টিলাবাড়ি, টেকেরেঘাট, পাক্কাবাড়ি, মোকামঘাট, আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চিমটিবিল, ছয়শ্রী, কালিশিরি, আমু চা বাগান ও নালুয়া চাবাগানের দুই শতাধিক মানুষ মাদক ব্যবসায় জড়িত।
এব্যাপারে বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল সামিউন্নবী চৌধুরী বলেন, বিজিবি’র পোষাক পরিধান করা সাধারণের জন্য সম্পুর্ন বেআইনি। তবে সিপন কিভাবে বিজিবি’র পোষাকে ঘুরাফেরা করছেন তা খতিয়ে দেখা হবে।
চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হক বলেন, সীমান্তে মাদক চোরাচালান রোধে পুলিশ চেষ্টা করছে। পুলিশ ইতোমধ্যেই বিপুল পরিমান মাদকসহ ৩০/৩৫ জনকে আটক করেছে। তিনি বলেন, অনেকেই কারাগার থেকে বের হয়ে আবার পুর্বের ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছে বলে তার কাছে তথ্য রয়েছে।

সূত্র- একাত্তরের  কথা

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি