সব
ক্ষুধার জ্বালা কত বড় জ্বালা, সেটা তো মানুষ জানে। আমাদের সে জ্বালা দূর করে কে? – আমাদের কৃষক। কাজেই কৃষকদের অামাদের মাথায় তুলে রাখা উচিৎ বলে অামি মনে করি। এই কথাগুলো ২০১৬ সালে কৃষকদের এক সমাবেশে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর প্রায় ১০০ বছর অাগে নারী জাগরনের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন- ক্ষেতে ক্ষেতে পুইড়া মরি রে ভাই পাছায় জোটে না ত্যানা বৌ এর পৈছা বিকায় তবু ছেইলা পায় না দানা। তিনি ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধে ওই সময়ের কৃষকের দুর্দশার চিত্র ও মুক্তির পথ বর্ননা করেছেন। কুষকের অবস্থা ১০০ বছর অাগে যা ছিল অাজো তাই অাছে। কৃষক দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করে, কিন্তু তাঁর দারিদ্রতা কখনো দূর হয় না। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ে, মাথাপিছু অায় বাড়ে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়ে কিন্তু কৃষকের কোনো উন্নতি হয় না। এর জন্য দায়ী পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। কৃষককে সব সময় বেশি দামে কিনতে হয় এবং কম দামে বেঁচতে হয়। ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধটি তৎকালীন দারিদ্রপীড়িত কৃষকদের বঞ্চনার মর্মন্তুদ দলিল। ভারতবর্ষের সভ্যতা ও অগ্রগতির ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি দেখিয়েছেন, সেখানে কৃষকদের অবস্থা কত শোচনীয়। পাকাবাড়ি, রেলওয়ে, ট্রামওয়ে, স্টিমার, এরোপ্লেন, মোটরগাড়ি, টেলিফোন, টেলিগ্রাফসহ অারও কত যে অাবিস্কার ভারতবর্ষের শহুরে মানুষের জীবন সমৃদ্ধ ও স্বচ্ছল করেছে তার সীমা নাই। কিন্তু সেই ভারতবর্ষেই কৃষকদের পেটে খাদ্য জোটে না, শীতে বস্ত্র নেই, অসুখে চিকিৎসা নেই। এমনকি তাদের পান্থাভাতে লবণও জোটে না। সমুদ্র তীরবর্তী লোকেরা সমুদ্র জলে চাল ধুইয়ে লবণের অভাব মেটানোর চেষ্টা করেন। টাকায় পঁচিশ সের চাল মিললেও রংপুরের কৃষকরা চাল কিনতে না পেরে লাউ, কুমড়া, পাটশাক, লাউশাক সিদ্ধ করে খেয়ে জঠর যন্ত্রণা নিবারণ করেন। কৃষকদের এই চরম দরিদ্রতার জন্য তিনি সভ্যতার নামে এক শ্রেণির মানুষের বিলাসীতাকে দায়ী করেছেন। এ ছাড়া গ্রামীণ কুটির শিল্পের বিপর্যয়ও কৃষকের দরিদ্রের অন্যতম কারণ। কুটির শিল্পকে ধ্বংস করে দিয়ে অাত্মনির্ভরশীল গ্রাম্য সমাজকে চরম সংকটের মধ্যে ফেলেছে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী। কৃষকদের এই মুমূর্ষু অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
অহী আলম রেজা, প্রভাষক, বাংলা বালাগঞ্জ সরকারি কলেজ।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি