সব
একটি শিশু স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত হলে তাকে স্কুলে যেতে হবে, এটি তার জন্মগত অধিকার। অথচ শিশুকে স্কুলে পাঠানোর বয়স হলেই অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার আর শেষ থাকে না। কথিত ভালো স্কুলে সন্তানদের পড়ানোর জন্য অভিভাবকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন আর তাই এক দৃষ্টিকটু ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে যা বাচ্চাদের শেখার স্বাভাবিকতা নষ্ট করে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহৎ উদ্যোগে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এবার প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ পালনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্রাথমিক শিক্ষার দীপ্তি, উন্নত জীবনের ভিত্তি’ ।
আমাদের দেশে চার বছর বয়স থেকেই বাচ্চাদের স্কুলিং চলছে বহুদিন যাবত, এটিকে এখন সাড়ে তিন বছর করার প্রস্তুতি চলছে। অভিভাবকদের বিষয়টি মনে রেখে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। যে উদ্দেশ্যে বাচ্চাদের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়, অনেক বাবা-মা-ই তা বুঝতে চান না। তারা সিলেবাস দেখতে চান, ক্লাসরুটিন দেখতে চান, বিভিন্ন ধরনের বই দেখতে চান, পরীক্ষা চান।অথচ এতটুকু শিশুর ওগুলো কোনোভাবেই প্রয়োজন নেই। চাপ প্রয়োগ করে কোনো ধরনের শিক্ষা নয়।
শিশুরা যখন অতিরিক্ত মানসিক দুংখ, ভয়, ক্রোধ বা মানসিক দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকে, তখন অতি সাধারণ কথা বা তথ্যও তারা মনে করতে পারেনা। আরো দেখা য়ায়, এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটলে শিশুর মস্তিষ্কের গঠন ও আকৃতিতে স্থায়ী পরিবর্তন বা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। শিক্ষা মনোবিজ্ঞানে বলা হয়েছে যে, শিশুরা খুবই আনন্দপ্রিয়। তারা আনন্দময় পরিবেশেই বেশি শেখে।
পক্ষান্তরে, ভীতিকর বা আনন্দহীন পরিবেশে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অনেক কম শেখে। শ্রেণিভিত্তিক যোগ্যতা অর্জনের দিক থেকে শিশুরা অনেক পিছিয়ে পড়ে। শিশুরা শিক্ষককে দেখে পরোক্ষভাবে শাস্তি বা মারামারি করা শেখে। স্বাভাবিকভাবে শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও সরাসরি শিক্ষক থেকে অনুকরণও করে।
শ্রেণিকক্ষে তারা যে আচরণ পায়, সেটা শিখে ফেলে। ঠিক একইভাবে, শাস্তি দেয়ার প্রক্রিয়া শিশুরা অবচেতনভাবে শিখে ফেলে যা পরবর্তী জীবনে যখন বড় হয় তখন সে শিক্ষকের মতো শাসনের প্রক্রিয়া হিসেবে শাস্তির প্রয়োগ করে থাকে। এসব কারণে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষকদের শিশু মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে, শিশু শিক্ষাবিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা থাকতেই হয়। তাদের জন্য এসব বিষয়ে নিবিড় প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ না পেলেও নিজেদেরকেই এগুলো শিখতে হবে।
শিশু শিক্ষার জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর অঙ্গীকার অনুসারে ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী প্রায় সকল শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তি করা হয়েছে। জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠাসহ শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নয়নে নানাবিধ পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। যার ফলে পাশের হার বেড়েছে, ঝরে পড়ার হারও কমেছে। বেগবান হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের ধারা। আর কাঙ্ক্ষিত এ উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখতে গণসচেতনতার বিকল্প নেই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় “শিক্ষা হল তাই যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশনই করে না বিশ্বসত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে।”
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি