খাদ্য নিরাপত্তা ও আমাদের ভাবনা

মোঃ জেদান আল মুসা;
  • প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২১, ৭:০৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

খাদ্য মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। বর্তমানে বিশ্বের বড় চ্যালেঞ্জ হলো খাদ্য নিরাপত্তা। বৈশ্বিক মহামারি করোনা এবং জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব এই চ্যালেঞ্জকে আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে। খাদ্যের যোগান বৃদ্ধির জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে দেশের বর্তমান সরকার ও জনগণ। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক হতে শুরু করে কৃষিবিজ্ঞানী, কৃষিবিদ, কৃষিসম্প্রসারন কর্মকর্তা এমনকি নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের সকলেই সচেষ্ট খাদ্য উৎপাদনে। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম জনবসতিপূর্ব একটি দেশ। আমাদের দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৩ শতাংশ কৃষিক্ষেত্রে নিয়োজিত। করোনাকালেও জিডিপিতে কৃষির অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ৫.৪৭ শতাংশ। দেশের খাদ্যের যোগান দেওয়া এবং প্রতিটি নাগরিকের খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং তাদের অধীনস্থ দপ্তর, পরিদপ্তর ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ। সকলের একান্তিক চেষ্টার ফলে এই ধরনের দুরুহ কাজটি সম্ভব হচ্ছে।

মহামারী করোনাকালেও আমাদের দেশের খাদ্য উৎপাদন থেমে থাকেনি। সরবরাহও স্বাভাবিক ছিল। গত ১৬ ই অক্টোবর ছিল বিশ্ব খাদ্য দিবস। নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে দিনটি। দিবসটির প্রতিপাদ্য “আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ-ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি, আর ভালো পরিবেশেই উন্নত জীবন”। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো দিন দিন কৃষি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে। যত্রতত্রভাবে কৃষিজমিতে আবাসন ও শিল্প কারখানার মতো কোন না কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এতে করে ফসল উৎপাদনের জমি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।

অনেকক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য হাইব্রিড ভ্যারাইটির বীজ ও চারা ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়লেও পুষ্টি ও খাদ্যের গুনাগুন বিবেচনা করতে হবে। তাছাড়াও Exotic Species এর আধিক্যের ফলে জীববৈচিত্র এর উপর বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। ভালো ফসলের পূর্ব শর্ত হচ্ছে ভালো মানের বীজ। উন্নতমানের বীজ স্বল্পমূল্যে ও সহজভাবে কৃষকের কাছে পৌছাতে পারলে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। রাসায়নিক সারের সাথে সাথে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে উৎসাহিত করার সাথে সাথে দেশের কৃষিবান্ধব Indigenous Technology এর ব্যবহারও করা যেতে পারে। কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস করে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে পরিবেশের তেমন ক্ষতি হবেনা। আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় যারা মূখ্য ভূমিকা পালন করছেন তারা হলেন এদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রয়োজনে সকল কৃষকের জন্য কৃষি বীমা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সবাইকে সমবায়ের মাধ্যমে বড় বা মাঝারি খামার স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। ডেইরী, পোল্ট্রি ও মাছের খামারের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। সকল ক্ষেত্রেই কৃষক/চাষী/খামারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। তাদের পেশাকে সমাজে সম্মানজনক পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি কৃষিশিল্পের জন্য সহজশর্তে ঋণ প্রদান ও প্রনোদণা দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে আমাদের কৃষিক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে।

আমাদের দেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় ২২৭২ ইউএস ডলার। সরকারের রূপকল্প- ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য দরকার কৃষি ও শিল্পের টেকসই উন্নয়ন সাধন। শিল্পের উন্নয়ন অনেকাংশে কৃষির উপর নির্ভরশীল কারণ শিল্পের কাঁচামাল আসে কৃষিপণ্য হতে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বেশ কিছু ইকোনোমিক জোন তৈরি হয়েছে তেমনিভাবে বাংলাদেশের কিছু জায়গাকে কৃষি জোন হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। কৃষি জোনের ভিতর কোন আবাসন কিংবা শিল্প কারখানা স্থাপন করা যাবে না। বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে বা উপজেলায় ভালো কাজের স্বীকৃতির জন্য শ্রেষ্ঠ কৃষক হিসেবে ১০/১৫কে নির্বাচন করা যেতে পারে। তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে পুরষ্কৃত করা যেতে পারে। প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষি সমাবেশ করা এবং ঐসব সমাবেশে কৃষককে পরামর্শ প্রদান করা যেতে পারে। সার-বীজের ব্যবহার, খামারের পরিচর্যা কেমন হবে, বালাই নাশক ব্যবহার, খাদ্য সংরক্ষণ, খাদ্যে ভেজাল রোধ, আধুনিক চাষাবাদ ইত্যাদি বিষয় কৃষকদের ভিডিও এর মাধ্যমে দেখাতে হবে। তাছাড়া কৃষকদের মূল্যায়নের জন্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে “কৃষক অগ্রাধিকার” কথাটা লেখা যেতে পারে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করেছে। অনেকক্ষেত্রে উদ্ধৃত্ত খাদ্য বিদেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। তবে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশের বাজারে ইচ্ছা করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষি পণ্যের দাম বৃদ্ধির ষড়যন্ত্র করে। এই বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। কোথাও কোথাও আবার খাদ্যের বিলাসিতাও দেখা যায়। এ ধরনের বিলাসিতা পরিহার করা যেতে পারে। বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। কৃষকের উন্নয়নে সরকারি পদক্ষেপগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে পৌছালে তখনই কাঙ্খিত সুফল পাওয়া যাবে।

লেখক-মোঃ জেদান আল মুসা
পুলিশ সুপার (এমএন্ডসিএ)
রেঞ্জ ডিআইজি’র কার্যালয়, সিলেট

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি