কোরবানির ঈদে স্বাস্থ্যকর নিয়মে মজা করে খাই

ডা: মো: আব্দুল হাফিজ শাফী;
  • প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২০, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৫ বছর আগে

সারা পৃথিবীতে বিস্তার করছে করোনাভাইরাস।আক্রান্ত হচ্ছে লাখ লাখ। এবার ঈদ উদযাপনের চেয়ে পরিবার-পরিজনের সুরক্ষাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।তাই ঈদের খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে সচেতন ।
পবিত্র ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি করা সামর্থবান মুসলমান ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব। এ সময় ঘরে ঘরে গোশত ও গোশতের তৈরী ভূনা খিচুড়ি, কালিয়া /রেজালা, কাবাব সহ নানা মুখরোচক ও তৈলাক্ত খাদ্য বেশি খাওয়া হয়। রসনা তৃপ্ত করতে গিয়ে ঈদের খাবারের সংগে স্বাস্থ্য রক্ষার কথা বিবেচনায় আনা খুবই জরুরী।

ঈদের আনন্দটুকু উদযাপনের জন্য আমাদের কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা জরুরি। যারা হার্টের রোগী বা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশী তাদের গরুর বা খাসির গোশত অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। যাদের মেদ ভুড়িঁ আছে, মোটা বা ওজন বেশি তারা অতিভোজন থেকে দূরে থাকবেন। কেননা অতিভোজন আপনার হার্টের সমস্যার কারণ হতে পারে। বয়োজ্যেষ্ঠদের/বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মাংস গিলতে এবং হজমে অসুবিধা হয় এবং অনেকের দাঁতের সমস্যা থাকে, তাদের প্রায়ই মাংসের টুকরা গলায় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পরিবারের এমন বয়োজ্যেষ্ঠ থাকলে তাদের জন্য মাংসের টুকরা ছোট ছোট করে রান্না করতে হবে। করোনাকালে মানসিক ক্লান্তি, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাটিয়ে মনকে প্রফুল্ল ও চাঙা রাখতে ঈদ আনন্দ একটি দারুণ উপলক্ষ। তবে অহেতুক আতংকিত না হয়ে এবার বিশেষ সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই জরুরি। পরিবারের কারও একটু উদাসীনতা সকলের বিপদের কারণ হতে পারে। তা ছাড়া, কোরবানি ঈদে স্বাস্থ্য-সচেতনরাও হঠাৎ মুটিয়ে যেতে পারেন। সতর্ক থাকলে বাড়তি বিড়ম্বনা এড়ানো সম্ভব।

ঈদের সময় দুটি রোগের প্রকোপ বেশী হয়। একটি হল ডায়রিয়া, এজন্য এসময় কিছু ওরস্যালাইন(ORS) বাসায় রাখা দরকার। আর যদি পাতলা পায়খানার পরিমাণ বেশী হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অন্য সমস্যাটি হল গ্যাস্ট্রিক এসিডিটি বা পেপটিক আলসার ডিজিজ। এতে বুক জ্বালা, পেটে ব্যথা, বমির ভাব, টক ঢেকুর ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। গ্যাস্ট্রিক এসিডিটির সমস্যার জন্য কিছু এন্টাসিড ট্যাবলেট বা ওমিপ্রাজল/প্যান্টোপ্রাজল জাতীয় ঔষধ এবং ডমপেরিডোন (অমিডন) বাসায় রাখা উচিত। ঈদের রান্নায় মানহীন কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ ডালডা ও ঘি ব্যবহার যথাসম্ভব পরিহার করাই উচিত।

গরু ও খাসির মাংসে সবকটি প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড থাকে, তাই প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। মাংসের প্রোটিন উদ্ভিজ প্রোটিনের চেয়েও উন্নতমানের। কলিজা বা যকৃতের মধ্যে থাকে লৌহ। কলিজা খেলে বাড়ন্ত শিশুকিশোর ও মেয়েদের রক্তস্বল্পতা দূর হয়। ক্রনিক কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে গরু ও খাসির মাংস যত সীমিত (চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসারে পরিমাণমতো) খাওয়া যায় তত ভালো। যাদের রক্তে কোলেস্টেরল-এর পরিমাণ বেশী, রক্তনালীর ব্লক জনিত সমস্যা বা উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের মগজ এবং চর্বি পরিহার করা উচিত, কারণ গরুর বা খাসির মগজের মধ্যে একশ ভাগ কোলেস্টেরল থাকে। পেট ভরে ঢেঁকুর উঠার আগে খাওয়া বন্ধ করতে হবে। ঈদের আনন্দ যেন নষ্ট না হয় সে জন্য হৃদরোগীর হার্টের ঔষধ ছাড়াও যারা বিভিন্ন ক্রনিক রোগের (ডায়াবেটিস /উচ্চ রক্তচাপ) ওষধ খাচ্ছেন সেগুলো মনে করে নিয়মিত খেতে হবে অর্থাৎ ডোজ যাতে মিস না হয়।

পরিশেষে বলি কোরবানির ঈদ বছরে একবারই আসে, এই ভেবে একসাথে বেশী না খেয়ে পরিমাণে অল্প অল্প করে বিভিন্ন সময়ে খাওয়া ভালো। এসময় খাবারের সাথে প্রচুর পরিমাণে সালাদ খাওয়া দরকার। ঈদের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করতে ভুলবেন না । এ সময় ইসবগুলের ভূষির শরবত খেলে কোষ্ঠ্যকাটিন্যের সমস্যা থেকে দূরে থাকা যাবে। ঈদের সময় ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি খাবার তালিকা থেকে যেন বাদ না পড়ে।

কোরবানির ঈদের দিন কাজের চাপ বেশী থাকে,তাই ডিহাইড্রেশন এবং মাথা ব্যথা এড়াতে চাইলে সারাদিনে পরিমাণ মত পানি এবং শরবত খেতে ভুলবেন না। একবারে,অনেক পানি না খেয়ে অল্প অল্প করে পানি খাবেন।

আসুন নিজের এবং পরিবারের প্রতি যত্নশীল হই।
ঈদ সবার জন্য বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। সবাইকে কোলাকুলিহীন আরেকটি ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা।

 

লেখক :
ডা: মো: আব্দুল হাফিজ শাফী,
বি.সি.এস (স্বাস্থ্য),
নাক-কান-গলা বিভাগ,
বি.এস.এম.এম.ইউ (প্রেষণে), ঢাকা।
drhafiz_33@yahoo.com

প্রিয় পাঠক, আপনিও সিলেটডায়রি’র অংশ হয়ে উঠুন। স্বাস্থ্য, শিল্প ,সাহিত্য, ক্যারিয়ার, পরামর্শ সহ যেকোন বিষয় নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন sylhetdiary@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি