সব
হতদরিদ্র ট্রলি চালক আনছার আলীর স্বপ্ন ছিলো চার সন্তানকে ঘিরে। উপজেলার মায়ারবাজারে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে অন্যের ট্রলি চালিয়ে চার সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে দিনাতিপাত করছিলেন আনছার আলী (৩৫)। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্ত ফুরায়, তবুও সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ বানানোর প্রবল ইচ্ছে ছিলো আনছারের। কিন্তু তার সে স্বপ্ন পূরণ হলো না। ট্রলি মালিকের অকথ্য নির্যাতন ও অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন আনছার আলী। শুক্রবার সকালে ইঁদুর মারার বিষ পান করে আত্মহত্যা করেন তিনি। তার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এ ঘটনায় শুক্রবার ট্রলির মালিক বিল্লাল মিয়াকে আসামি করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দয়ের করেছেন
জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জের উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের ভাটরাই গ্রামের দরিদ্র কৃষক ধন মিয়ার ছেলে আনছার আলী সপরিবারে মায়ারবাজারের পাশে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। জীবিকার তাগিদে পাশ^বর্তী বরমসিদ্ধিপুর গ্রামের মৃত আব্দুল গণির ছেলে বিল্লাল মিয়ার মালিকানাধীন একটি মালবাহী ছোট ট্রলি (কুত্তা গাড়ি) চালাতেন আনছার। গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের দিন দুপুরে মায়ারবাজার ব্রিজ সংলগ্ন বরমসিদ্ধিপুর মাদ্রসার সামনের ভাঙ্গা রাস্তায় উল্টে যায় ট্রলিটি। এতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন হয়।
এরপর থেকেই ট্রলির মালিক বিল্লাল মিয়া নানাভাবে চালক আনছার আলীকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে। ট্রলির ক্ষতিপূরণ বাবদ আনছার আলীর কাছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দাবি করে মারধর করেন বিল্লাল মিয়া। বিষয়টি স্থানীয় মুরব্বিদের জানালে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বিল্লাল। গত বৃহস্পতিবার রাতে আনছার আলীর ঘরে ঢুকে বাচ্চাদের সামনেই তাকে বেধড়ক মারধর এবং অপমান করে বিল্লাল মিয়া ও তার সহযোগিরা। এরপর তাকে মায়ারবাজারে ধরে এনে একটি দোকানে প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে কিল, লাথি, ঘুষি এবং লাঠি দিয়ে প্রহার করা হয় আনছার আলীকে। আনছার আলীর গলায় ও বুকে পা দিয়ে চাঁপ দিয়ে প্রাণে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আনছারের আর্তচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে পালিয়ে যায় নরপশু বিল্লাল ও তার বাহিনী। হতদরিদ্র আনছার আলীর পক্ষে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব ছিলো না। অপমান সহ্য করতে না পেরে রাগ, ক্ষোভ ও লজ্জায় পরদিন শুক্রবার সকাল ১০টায় নিজের ঘরে থাকা ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন আনছার আলী।
তাৎক্ষণিক তাকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আনছার আলীকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে মরদেহের সুরতহাল করেন এবং এমএজি ওসমানী হাতপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বাদ আছর গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে আনছার আলীর মরদেহ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার আনছার আলীর স্ত্রী কমলা বেগম বাদি হয়ে বিল্লাল মিয়ার বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা (নম্বর-৫) দায়ের করেন।
এদিকে ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দিয়েছে নরপশু বিল্লাল মিয়া ও তার সহযোগিরা। স্থানীয়রা জানান, বিল্লাল মিয়া এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। বিল্লাল মিয়া মাদক ব্যবসার অবৈধ অর্থ দিয়ে এলাকায় তৈরি করেছে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। বিল্লালের কথার খেলাপ হলেই সে ও তার বাহিনী নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা, মারধর ও নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। গোপন সূত্রে জানা গেছে, বিল্লাল মিয়া বর্তমানে পালিয়ে কিশোরগঞ্জে তার মূল বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল জানান, এ বিষয়ে মামলা করা হয়েছে। আমাদের তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসা পরে আইন গত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার আনছার আলীর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার গ্রামের বাড়িতে বাদ আছর জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে বলেও জানান ওসি নজরুল।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি