সব
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ডলুছড়া ও বেলকুমা খাসিয়াপুঞ্জির ঐতিহ্যগত ও প্রথাগত ভূমি রক্ষার আবেদন জানিয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আদিবাসী, মানবাধিকার ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ১৩ জন বিশিষ্ট নাগরিকের জরুরিপত্র রোববার দুপুরে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমানের কাছে লেখা ওই পত্রে বলা হয়, ৪ অক্টোবর সোমবার মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বনবিভাগ ও সামাজিক বনায়নের তথাকথিত উপকারভোগীসহ ডলুছড়া খাসিয়া পুঞ্জির ভূমিতে যাবেন এবং জোরপূর্বক গাছ রোপণ করবেন। সামাজিক বনায়নের নামে বনবিভাগের একটি ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশাসনের এমন তৎপরতা প্রশ্নের উদ্রেক করে। একথা প্রণিধানযোগ্য যে, খাসিয়া জনগণ যুগ যুগ ধরে তাদের প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভূমিতে বসবাস করে আসছেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদ আদিবাসীদের এই প্রথাগত ভূমি মালিকানার সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালে আইএলও কনভেনশন নং ১০৭ যা আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগণের জন্য নিবেদিত অনুসমর্থন করেছেন, যেখানে আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার স্বীকৃত। বনবিভাগ সামাজিক বনায়নের নীতিমালা উপেক্ষা করে, খাসিয়াদের সাথে কোনো আলোচনা না করে উপকারভোগীর একতরফাভাবে তালিকা করেছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এ কারণে খাসিয়াদের সাথে উপকারভোগীদের মধ্যে সমস্যা ও জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু দুস্কৃতকারী খাসিয়াদের পানজুম ধ্বংস করেছে এবং আক্রমণ করেছে, যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এইসব সমস্যা সমাধানের জন্য খাসিয়া নেতৃবৃন্দ মাননীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতও করেছেন। তাছাড়া এই ভূমি নিয়ে মৌলভীবাজার আদালতে নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে।
পত্রে উল্ল্যেখ করা হয়, ডলুছড়া, বেলকুমা ও তৎসংলগ্ন অন্যান্য পুঞ্জির নিরীহ খাসিয়াদের উপর আক্রমণরে ঘটনায় ইতিমধ্যে নাগরিকদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
নাগরিকেরা এমতাবস্থায় ডলুছড়া খাসিয়াপুঞ্জির খাসিয়াদের উপর আদিবাসী অধিকার ও মানবাধিকার লংঘনের মত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা ও প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে সামাজিক বনায়নের প্রকল্প গ্রহণ না করতে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্ববান জানানো হয়।
জরুরিপত্রে স্বাক্ষর করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল, সভাপতি, নিজেরা করি সমন্বয়ক খুশী কবির, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন-এর প্রাক্তণ চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মেসবাহ কামাল, পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা)-এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বেসরকারী সংস্থা এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য শারমীন মুরশিদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) শাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, বাংলাদেশ খ্রীস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আদিবাসী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের আঞ্চলিক সমন্বয়ক ফাদার যোসেফ গমেজ ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম।
বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পত্র হস্তান্তরকালে উপস্থিত ছিলেন ইতিহাস-ঐতিহ্য ও প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রাহক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট সুদীপ্ত অর্জুন।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি