সব
কানাইঘাট উপজেলা গঠিত ৯ টি ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা। বিশুদ্ধ পানির জন্য বাংলাদেশ রুরাল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের অধীনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গভীর নলকূপ বসানোর কাজ হাতে নিয়েছিল।
তবে সরকারি এ প্রকল্পের কাজের টাকা লুটপাটসহ নানা অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। নলকূপ না বসিয়ে গ্রাহক তৈরি, জামানতের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়, কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন, নলকূপের প্লাটফর্ম তৈরি না করাসহ বিভিন্ন খাতের কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০অর্থ বছরে উপজেলায় বহু গভীর নলকূপ (ডিপ টিউবওয়েল),সরকারী পুকুর খনন,ওয়াশ বল্ক ও ল্যাট্রিন স্থাপনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ রুরাল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কানাইঘাট,উপসহকারী প্রকৌশলীর অধীনে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রতিটি গভীর নলকূপ স্থাপন ও প্লাটফর্ম তৈরিতে গ্রাহকের কাছে থেকে(ব্যাংক চালান ভাবৎ)-৭ হাজার ১০০ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও গ্রাহকপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গ্রাহক সরাসরী ব্যাংক চালান জমাদানের পর রশিদ নিয়ে অফিসে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা মূলত গোপনীয়তা রক্ষার শর্তে চুক্তিহারে সে টাকা তুলেদেন স্হানীয় জনপ্রতিনিধিদের হাতে।
জনপ্রতিনিধি মারফর ৭ হাজার ১০০ টাকার বদলে ১০ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত চলে যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুজন সরকারের হাতে।
উপজেলার ৭ টি সরকারী পুকুর খনন ও সংস্কার কাজে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নামকাওয়াস্তে শুরুর পূর্বে শেষ হওয়ার মত কাজ করলেও এ প্রকল্পের কোন কাজ পরিদর্শন না করেই বিল উত্তোলন করে দেন সুজন সরকার।
তাছাড়া নলকূপ স্থাপন করে হাতেগুণা কয়েকটিতে প্লাটফর্ম করে বাকীগুলো তৈরির কাজ এখনো শেষ হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, প্লাটফর্ম না করেই তার বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
সরেজমিনে কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কিছু নলকূপ ময়লা আবর্জনার মধ্যে পড়ে রয়েছে অযত্নে। আবার কোনো কোনো নলকূপের মালিকেরা প্লাটফর্ম তৈরি করে নিয়েছেন নিজস্ব অর্থায়নে। এসব নলকূপের কোনো কোনটাতে আবার পানিও উঠে না। মরিচিকা পড়ে বিকল অবস্হায় পড়ে থাকতে দেখা সরকারী বরাদ্দকৃত অনেক ডিপ টিউবওয়েল।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় কয়েকটি ইউনিয়নে জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুজন সরকারের রয়েছে নিজস্ব সিন্ডিকেট। তাদের মাধ্যমে গ্রাহক সংগ্রহ করে নলকূপ বিক্রি করেন।বিক্রিত নলকূপের মধ্যে সবচেয়ে বেশী রয়েছে ঝিঙ্গাবাড়ি ও রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে।
এদিকে উপজেলার ১ ও ২ নং লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের চলতি বরাদ্ধের রিং টিউবওয়েল-এ নিম্নমানের কাজের অভিযোগ সুজন সরকারের কাছে করলেও কোন সুফল পাচ্ছেননা গ্রাহকরা।
৩ নং দিঘীরপার ও ৪ নং সতবাক ইউপি’র একাদিক লোক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানদের যোগসাজশে নিরবে চলে টিউবওয়েল বাণিজ্য।রহস্যজনক কারণে ভুক্তভোগী কেউ কেউ মুখ খুলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
৫ নং বড় চতুল ইউপি দেলওয়ার শিকদার জানান তাদের এলাকায় কয়েকজনের বাড়িতে ডিপ টিউবওয়েল রয়েছে তারা সবাই টাকা দিয়েই ক্রয় করেছেন।তাছাড়াও টিউবওয়েল বাণিজ্য নিয়ে ইউ পি সদস্যদের সাথে পরিষদের আভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে।
৬ নং সদর ইউপি,র বাসিন্দা আহবাব উল মজিদ,মৌঃওয়াদুদ আহমদ জানান তারা টাকার বিনিময় নলকূপ ক্রয় করেছেন।শামীম আহমদ নামে একজন জানান বিনা টাকায় মাত্র ২৫০ ফিট লেয়ারে একটি টিউবওয়েল দিলেও প্লাটফর্ম আমি নিজের টাকায় করেছি।যুবলীগ নেতা সুহেল আহমদ বলেন আমাদের জানাশুনা অনেক টিউবওয়েল ৪০-৫০ হাজার করে নিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে বিক্রি হয়েছে।
৭ নং ইউপি’র কায়েস্ত গ্রামের আব্দুল মান্নান,দক্ষীণ বড়দেশের আং রহমান,শরীফ আহমদ,মামুন টেইলার্স,প্রত্যেকে ৩০/৩৫ হাজার টাকা দরে ক্রয় করেন। গাছবাড়ি নয়াগ্রামের সেলিম আহমদ নামের এক ব্যক্তি জানান আমরা দলীয় মানুষ এগুলা পাইনা।চেয়ারম্যান ও টিউবওয়েল অফিসের দুই একজন লোক নির্দলীয় মানুষের কাছে টাকা দিয়ে বিক্রি করে দেয়।
৮ নং ঝিঙ্গাবাড়ি ইউপি’র লামা ঝিঙ্গাবাড়ির সালিম আসলাম,শামস উদ্দীন,দীগর নয়ামাটির আব্দুল মুসব্বির,হাজী আজীর উদ্দীন,আবুল বশর সহ অনেকের মধ্যে তাদের কেউ কেউ ৩০-৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে আবার কেউ জনপ্রতিনিধির সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় নলকূপ পেলেও অনেকের প্লাটফর্ম করা হয়নি।
উপজেলার ৯ নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের তালবাড়ি গ্রামের কবির আহমদ চৌঃ,শাহিন আহমদ চৌঃ জানান, আমাদের কাছ থেকে কোন টাকা না নিলেও বীরদল আগকোফা গ্রামের মাষ্টার শামছ উদ্দীনের নেওয়া টিউবওয়েল ছাড়া আশেপাশে কোনটিরই প্লাটফর্ম স্থাপন করা হয়নি। ফালজুর গ্রামের সায়েম আহমদ বলেন চেয়ারম্যানের কাছে নলকূপের চাহিদা জানালে তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকল্প কর্মকর্তা সুজন সরকারের কাছে ১৫-২০ হাজার টাকা পৌছে দেয়ার পরামর্শ দেন।এ ছাড়াও ফালজুর গ্রামের কামাল উদ্দীন ইউ পি সদস্য ফখর উদ্দীনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকায় টিউবওয়েল ক্রয়ের খবর পেয়ে তার বাড়িতে গেলে কোথাও নলকূপ স্হাপনের আলামত পাওয়া যায়নি।আরো ৫ হাজার টাকা বেশী পেয়ে অন্যত্র বিক্রির অভিযোগ রয়েছে প্রথম গ্রাহক কামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও এলাকার বেশ কিছু নলকূপ স্থাপন হলেও প্লাটফর্ম তৈরি করে দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের উপ-প্রকৌশলী সুজন সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন”আমি কাজের তদারকি করি।প্লাটফর্ম ছাড়া এমন একটাও টিউবওয়েল নেই।তবুও আপনি একটা তালিকা দেন আমি সমাধান করে দেব।পুকুরের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন আমি বিল উত্তোলন করে দেইনি একাজ এখনও অসমাপ্ত রয়েছে।
কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জনাব বারীউল করিম খান বলেন, এ বিষয়গুলি সম্পর্কে আমার জানা নেই।এগুলা তাদের(জনস্বাস্থ্য)কর্মকর্তার বিষয়।তার কাছ থেকে জেনে নিন।কারো কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি