করোনায় ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর ঈদ আনন্দ নেই

সিলেট ডায়রি ডেস্ক ;
  • প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২০, ৮:৫৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

মাত্র একদিন পর মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। করোনা মহামারির কারণে কিছুটা কম হলেও সারাদেশে বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। কিন্তু এ আমেজ পুরোপুরি উধাও দেশের ১০ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে না হলেও দিশাহারা অবস্থায় আছেন বেসরকারি এসব শিক্ষক-কর্মচারী।

বেতনের সঙ্গে প্রাইভেট টিউশনিও বন্ধ হওয়ায় সংকট আরো বেড়েছে। ফলে এই শিক্ষক-কর্মচারীরা জীবন চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। ঈদের আনন্দের কথা তারা ভাবতেও পারছেন না।

সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন দেশের প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রায় ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। দেশের প্রায় সাত হাজার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষকরা প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতায় এখনো নন-এমপিওভুক্ত। এ ছাড়া সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় তিন লাখ খণ্ডকালীন বা অস্থায়ী শিক্ষক-কর্মচারী গত মার্চ মাসের পর থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।

বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের জন্য অবশ্যই তাকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু পাঁচ হাজার টাকায় একজন শিক্ষক কত দিন চলতে পারেন? আগে শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনি করলে কিছু টাকা পেতেন। কিন্তু করোনার পর তাও বন্ধ। চলতি অর্থবছরে নতুন এমপিওভুক্তির বরাদ্দের ব্যাপারে এখনো আমরা কিছু জানতে পারিনি। চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন আমাদের শিক্ষক-কর্মচারীরা।

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার ২৫ হাজার শিক্ষক বেতন না পেয়ে দীর্ঘদিন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ৫১ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষক ও ১০ হাজার ২০৪ জন কর্মচারীকে প্রায় ২৮ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে একজন শিক্ষক পাঁচ হাজার ও কর্মচারী আড়াই হাজার করে টাকা পেয়েছেন।

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ সভাপতি এস এম জয়নাল আবেদিন জিহাদী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ হয়ে গেছে। কিন্তু ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ তো দূরের কথা, এখনো এমপিওভুক্তও হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের এমপিওভুক্তির জন্য গত অর্থবছরে বরাদ্দ দিলেও মন্ত্রণালয়ের গাফিলতিতে এমপিও হয়নি। ৩৬ বছর ধরেই আমাদের শিক্ষকদের ঈদের আনন্দ নেই।

এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষকরা প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতায় এখনো নন-এমপিওভুক্ত। বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক নেকবর হোসাইন বলেন, এমপিওভুক্ত কলেজে চাকরি করেও আমরা নন-এমপিও শিক্ষক। দীর্ঘদিনেও আমাদের জনবল কাঠামোতেই অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। অথচ আমরা লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। সামনে ঈদ অথচ বেতন নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় দিন কাটছে।

সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে প্রথম পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের নন-এমপিও ৮০ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষক ও ২৫ হাজার ৩৮ জন কর্মচারীকে প্রায় ৪৬ কোটি টাকার অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ৫১ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষক ও ১০ হাজার ২০৪ জন কর্মচারীকে প্রায় ২৮ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩১ আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

জানা গেছে, সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি হিসেবে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করার কাজ শুরু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীর বয়স ও শ্রেণি অনুযায়ী জ্ঞান অর্জনের বিষয় সামনে রেখে সিলেবাস সংশোধন করা হবে।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি