করোনার প্রভাব পড়েছে শ্রীমঙ্গলের মৃৎশিল্পে

এস কে দাশ সুমন, শ্রীমঙ্গল;
  • প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২০, ৪:৫৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৫ বছর আগে

শারদীয় দুর্গা পূজোর আর মাত্র ৫৫ দিন বাকী। দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গোৎসব। প্রতিবছরই শারদীয় উৎসবকে ঘিরে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সংস্কৃতির এক মিলনমেলা বসে সমগ্র দেশব‍্যাপী। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবার দূর্গাপূজোর এবার থাকছেনা কোথায় জমকালো আয়োজন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি এবার শারদীয় দূর্গাপূজা উদযাপনের নিয়মনীতি বেঁধে দিয়েছে, যেখানে থাকছে ১৫ দফা নির্দেশনা। নির্দেশনায় থাকছে মহালয়া অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে করতে হবে, প্রতিমা তৈরী থেকে পূজা সমাপ্তি পর্যন্ত নিজস্ব উদ্যোগে নিরাপত্তা ব‍্যাবস্থা রাখতে হবে। মন্দির পূজা মন্ডপে আগত দর্শনার্থীদের জীবানুমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব‍্যাবস্থা রাখতে হবে, দর্শনার্থী ভক্ত পুরোহিতে সকলকেই বাধ্যতামূলক মাস্ক ব‍্যাবহার করতে হবে সহ ১৫ টি নির্দেশনা।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজোর আয়োজন হয় বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে পঞ্জিকা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দু মাসে আগেই কাজ শুরু করেন দেশের অসংখ্য মৃৎশিল্পীরা কিন্তু এবার বদলে যাওয়া করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিমা শিল্পীরা সবচাইতে বেশী উৎকন্ঠায় ছিলেন। জীবন ও জীবিকার কাজের মাধ্যম অত্যন্ত সীমিত হয়ে পড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই আছেন উৎকন্ঠায়।

পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মূলত প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন মৃৎশিল্পীরা। অন্যান্য বছর এই সময়ে ব্যস্ততা থাকলেও এ বৎসর অনেক মৃৎশিল্পীরা অলস সময় পার করছেন। করোনার ও পারস্পরিক দূরত্ব বিধির জেরে ইতিমধ্যেই বাসন্তী, গণেশ, মনসা, বিশ্বকর্মা পূজোসহ বেশকিছু পূজোর সময় পার হলেও কেউ প্রতিমা গড়ে পূজো করেনি। কিছু কিছু প্রতিমা গড়েও বিক্রি করতে পারেননি অনেক মৃৎশিল্পীরা। ফলে লোকসানের বোঝা বেড়েছে আবার সংসারে খরচ বেড়েই চলছে।

ঢাকার বিক্রমপুর ষোলঘর থেকে শ্রীমঙ্গলে প্রতিমা তৈরী করেতে আসেন বিশ্বজিৎ পাল তিনি বলেন, ৩৭ বছর যাবৎ শ্রীমঙ্গলে প্রতিমা তৈরীর কাজ করি, বিগত বছর গুলোতে কাজ করছি ১০ থেকে ১২ টি প্রতিমার। কাজের জন‍্য প্রায় তিন মাস আগে থেকেই পরিবার নিয়ে শ্রীমঙ্গল চলে আসি কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন, নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে আছে শংকা তেমনি হাতে কাজের অর্ডার নেই একটিও শুধুমাত্র ফোনে যোগাযোগ ছাড়া কেউ কাজের অর্ডার দেন নি এখনো। তাই পরিবারের আয় রোজগারের পথ রুদ্ধ হলে আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া আমাদের মতো মৃৎশিল্পীদের জীবন চালানো দুস্কর।

শহরের শাপলা বাগ এলাকার মৃৎশিল্পী সুনীল চন্দ্র পাল বলেন, আগে ৬ জন কারিগর নিয়ে কাজ করতাম এবার দেশের পরিস্থিতি ভালো না থাকায় বর্তমানে ১ জন কাজ করছে। হাতে নতুন কাজ না থাকায় কারিগরকে আনতে পারছি না। বিগত ৫ মাস ধরে করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় কারিগরদের বেতন, ঘর ভাড়া, কারখানা ভাড়া, খাওয়া দাওয়া এই সবকিছু চালাতে হচ্ছে ঋণ করে টাকা এনে। এবছর করোনার কারণে প্রতিমা তৈরি বন্ধ থাকায় প্রায় ৮/১০ লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ অবস্থায় কি করে যে আছি একমাত্র আমরাই জানি।

শ্রীমঙ্গল ডাকবাংলো পুকুরপাড় পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপক পাল জানান, পূজোর সাথে সেই ছোট বেলা থেকেই জড়িয়ে রয়েছি, আমাদের পরিবারে ছোট বড় সকলেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখে পূজোতে কে কি করবে সাথে আত্মীয়রা বেড়াতে আসেন বছরে এই একটি সময় পরিবারে একটি মিলনমেলা তৈরী হয় কিন্তু এবার শারদীয় দূর্গা পূজা সীমিত আকারে করার বাধ্যবাধকতা থাকায় থাকবেনা কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্ডপ অঙ্গনে আয়োজন হবে সীমিত আকারে। আসবেন না অনেক অতিথি বা আত্মীয়রা। এই পরিস্থিতিতে এবারই প্রথম পরতে হয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ মৌলভীবাজার জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহর তরফদার বলেন, বৈশ্বিক মহামারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশের সরকারের নিদর্শনা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ঠিক রেখে এবার বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ১৬ দফা নিদর্শনা দিয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই উৎসব উদযাপন করতে হবে। আর শিশু বয়স্কদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। আমরা যেনো সৃষ্টিকর্তায় আশির্বাদে এই মহামারি থেকে মুক্ত হতে পারি এবার এটিই আমাদের প্রার্থনা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। যদি কেউ এরকম ক্ষতিগ্রস্ত থাকে তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি