করোনার নমুনা সংগ্রহ বুথ ক্রমেই বন্ধ হচ্ছে

সিলেট ডায়রি ডেস্ক ;
  • প্রকাশিত: ৭ আগস্ট ২০২০, ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের বুথগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিতর্কিত জেকেজির সাতটি বুথ বন্ধ হয়ে গেছে। ৯৭টি বুথ বন্ধের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে ব্র্যাক। এতে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে তারা এ সংক্রান্ত কাজ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

এতে নমুনার অভাবে আরও সীমিত হয়ে আসতে পারে কোভিড-১৯’র পরীক্ষা। ফলে সংক্রমণের মাত্রা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, আক্রান্ত ব্যক্তিরা পরীক্ষা ছাড়াই ঘোরাফেরা করে নিজের অজান্তেই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে সারা দেশের মানুষ ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান  বলেন, এই বুথগুলো বন্ধ হলে পরীক্ষার হার অনেক কমে যাবে।

এখন কোনোভাবেই নমুনা পরীক্ষা কমানো যাবে না। পরীক্ষা বাড়াতে হবে, না হলে শনাক্তের সংখ্যা বোঝা যাবে না, দেশে সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতিও বোঝা যাবে না।

দৈনিক কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার পরীক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সরকারের উচিত ব্র্যাকের সঙ্গে আলোচনা করে বুথগুলো চালু রাখা।

তারা যদি না পারে, তাহলে সরকার ওই বুথগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও লোকবল দিয়ে চালাতে পারে। কিন্তু পরীক্ষা কোনোভাবেই কমানো যাবে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম থেকেই বেশি বেশি করোনা পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এমনকি দেশের রোগতত্ত্ববিদ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পর্যাপ্তসংখ্যক পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

শুরুতে পরীক্ষা না বাড়ানোয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। আলোচনার মধ্যে এক পর্যায়ে দৈনন্দিন পরীক্ষার সংখ্যা ধীরে ধীরে ২০ হাজারে উন্নীত হয়। কিন্তু বর্তমানে তা দশ হাজারের কোঠায় নেমে এসেছে।

এ পর্যায়ে ৩১ আগস্ট থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্র্যাকের স্থাপিত ৯৭টি বুথ। এতে নমুনা সংগ্রহের হার আরও সীমিত হয়ে আসছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যদি নিুমুখী পরীক্ষার হার ঊর্ধ্বমুখী করানোর উদ্যোগ নেয়া না হয়, তাহলে দেশে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে।

জানা গেছে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক দেশের বিভিন্ন স্থানে ৯৭টি বুথের মাধ্যমে রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করত। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৮টি সাধারণ বুথ এবং ২০টি বিদেশগামীদের নমুনা সংগ্রহের বুথ রয়েছে।

বাকিগুলো কুমিল্লা, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে। তবে চলতি মাসের পর থেকে তারা আর কোনো নমুনা সংগ্রহ করবে না বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানিয়ে চিঠি দিয়েছে।

এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ার সারা দেশে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৭টি বুথের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ শুরু করে। যা পরে বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া বর্তমানে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহও ক্ষীণ হয়ে এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে ১১টি ভ্রাম্যমাণ দল রাজধানীতে বাসায় নমুনা সংগ্রহ করেছে। তাও শুধু বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থদের ক্ষেত্রে এই সেবা প্রযোজ্য।

এখন শুধু উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা পর্যায়ে সদর হাসপাতাল এবং টারশিয়ারি পর্যায়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।

বেসরকারি কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হবে বিদেশগামীদের। ব্র্যাক এককভাবে ২০টি বুথ দিয়ে বিদেশগামীদের নমুনা সংগ্রহ করে আসছে।

এতে সংশ্লিষ্টরা খুবই সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু এই সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

গত ২৭ জুলাই ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে এক চিঠিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চিঠিতে তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহযোগিতায় ও ব্র্যাকের পরিচালনায় কোভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহ বুথগুলোতে নমুনা সংগ্রহের জন্য উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

যার পরিপ্রেক্ষিতে ১১ মে থেকে ব্র্যাক নমুনা সংগ্রহের কাজ করে। আগামী ৩১ আগস্টের পর থেকে এই নমুনা সংগ্রহের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ৩৮ বুথ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নমুনা সংগ্রহ করে সরকার নির্ধারিত ল্যাবে জমা দিচ্ছে। বর্তমানে বুথগুলোর কার্যক্রম সীমিত আকারে পরিচালিত হচ্ছে। যা এই মাসের শেষ নাগাদ একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে গত এপ্রিল ও মে মাসে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।

ওই সময় দেশের সব জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি সহায়তায় বুথ স্থাপন করে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়।

এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআরের ভ্রাম্যমাণ দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ শুরু করে। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিস্থিতি অনেকটাই সংক্ষিপ্ত হয়ে আসছে।

মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের তথ্য মতে, কোভিড-১৯ টেস্ট ফি নির্ধারণ হয় জুন মাসের ২৯ তারিখ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, হাসপাতালে গিয়ে টেস্ট করাতে ২০০ টাকা ফি দিতে হবে।

আর বাসায় গিয়ে পরীক্ষা করাতে দিতে হবে ৫০০ টাকা। ফি নির্ধারণের পর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হার ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে।

যেখানে ২০ হাজারের বেশি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হতো সেখানে ধীরে ধীরে এটি ১১-১৩ হাজারে নেমে আসে। ঈদুল আজহার ছুটিতে আরও কমে ১০ হাজারের নিচে যায়।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট-আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন  বলেন, দুই সপ্তাহ পর দেশে করোনা সংক্রমণের একটি ধাক্কা আসতে পারে।

তখন রোগীর সংখ্যা অতিরিক্ত বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। এক্ষেত্রে সরকারকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। বিশেষ করে পরীক্ষার সংখ্যা এবং কন্টাক ট্রেসিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

করোনা পরীক্ষায় যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি বাতিল করতে হবে। একটি কথা মনে রাখতে হবে, পরীক্ষা কমিয়ে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কিভাবে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, তবে এ বিষয়ে এখনও কর্মপরিকল্পনা নির্ধারিত হয়নি।

হয়তো দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোভিডের নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা আসতে পারে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা  বলেন, আমরা টিভি স্ক্রলে, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নমুনা দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

ব্র্যাকের বুথ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি। তবে এই বুথগুলো যেন বন্ধ না হয়, সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিভাবে এগুলো সচল রেখে নমুনা সংগ্রহ বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি