কমলগঞ্জে চা শ্রমিকদের দুইপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি;
  • প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২১, ৮:২৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২ বছর আগে

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ন্যাশনাল টি কোম্পানির পাত্রখোলা চা-বাগানে দখলদারিত্ব নিয়ে চা শ্রমিকদের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে দুই শ্রমিক আহত হয়েছেন। কাজ বন্ধ রেখে চা শ্রমিকদের একটি অংশ চা-বাগানের কারখানার সামনে দেশীয় অস্ত্র তীর, ধনুক, দা, লাঠি নিয়ে অবস্থান করছেন। এতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাগানে পুলিশ ও র‍্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।

সোমবার (১৪ জুন) সকাল ৭টায় চা-বাগানের কারখানার সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ ও উত্তেজনার ঘটনার খবর পেয়ে সোমবার সকাল ৯টায় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (কমলগঞ্জ- শ্রীমঙ্গল সার্কেল) শহিদুল ইসলাম মুন্সী, কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানার নেতৃত্বে পুলিশের দু’টি দল ঘটনাস্থলে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাত্রখোলা চা-বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দু’টি গ্রুপের মধ্যে দখলদারিত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সভাপতি শিপন চক্রবর্তী ও সম্পাদক দুলাল ছত্রীর গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ম্যানেজমেন্ট সম্পাদক গ্রুপের সাথে সকল সুযোগ-সুবিধা ও কার্যক্রম পরিচালনা করার কারণে সভাপতি গ্রুপ ক্ষুব্ধ রয়েছে।

এর জের ধরেই সোমবার সকালে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এতে সভাপতি গ্রুপের একজন ও সম্পাদক গ্রুপের দুইজন আহত হন। তারা স্থানীয়ভাবে বাগান হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। ক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের একটি পক্ষ কারখানার গেটের ভেতরে থাকা পাগলা ঘণ্টা বার বার বাজিয়ে শ্রমিকদের একত্রিত করছে। উত্তেজিত শ্রমিকরা কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে সহকারী পুলিশ সুপারের (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সার্কেল) নেতৃত্বে চার গাড়ি পুলিশ অবস্থান করছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে র‍্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে বিক্ষোভকারীদের একটি পক্ষ চা-বাগানের সমস্যাকে দায়ী করছেন।

চা শ্রমিক শংকর কৈরী, ফুলকুমারী চাষা, অলকা গঞ্জু, পহেলা গীতা, গোলশান বিবি ও রাধেশ্যাম গড় অভিযোগ করে বলেন, চা সেকশনে বজ্র্রপাতের সময় আমাদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। ম্যানেজমেন্টের অনুগত লোকজন সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও আমরা সাধারণ শ্রমিকরা তা থেকে বঞ্চিত।

পাত্রখোলা চা-বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি শিপন চক্রবর্তী বলেন, আমি শ্রমিকদের ভোটে নির্বাচিত হয়েও শ্রমিকের জন্য কোনো কাজ করতে পারছি না। আমাকে কোনো কাজে বাগান ম্যানেজমেন্ট কোনো প্রকার সহযোগিতা করছে না। গত ২০১৯ সাল থেকে এ চা-বাগানের বেশ কিছু শ্রমিকের বসতঘর জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির সময় ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। চা-বাগান কর্তৃপক্ষকে ঘর মেরামতের দাবি জানিয়ে এলেও দেখা গেছে একটি পক্ষের চা শ্রমিকদের ঘর মেরামত করা হলেও প্রকৃত জরাজীর্ণ ঘর মেরামত ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু ম্যানেজমেন্ট ও পঞ্চায়েত সম্পাদক দুলাল অলমিকের হয়ে কাজ করছেন। তিনি আমাদের কোনোরকম সহযোগিতা করছেন না। আমাদের আজকের সমস্যার সঙ্গে তিনি জড়িত।

অপরদিকে পঞ্চায়েত সম্পাদক দুলাল অলমিক বলেন, আসলে সভাপতি শিপন চক্রবর্তী বহিষ্কৃত থাকায় বাগানের দায়দায়িত্ব থেকে বঞ্চিত। সে কারণেই তিনি গ্রুপ সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিরতা করছেন।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) এজিএম ও পাত্রখোলা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক শামছুল ইসলাম সেলিম বলেন, আসলে বাগান ব্যবস্থাপনার কোনো সমস্যা নয়। চা-বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দু’টি গ্রুপের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এ বিরোধেই আজ পাত্রখোলা চা-বাগানে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতিও শান্ত করা হচ্ছে। সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে।

 

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি