সব
কবি আব্দুল বাসিতের মৃত্যুর দায় সিটি কর্পোরেশনকে নিতে হবে। উন্নয়নের নামে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এ দায় সিসিকের। অবিলম্বে প্রকৌশলী, ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে শাস্তির আওতায় আনাসহ কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
আজ রোববার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় সিলেটের কেন্দ্রীয় শহিদমিনারের সম্মুখে সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে বক্তারা এ দাবি জানান।
সম্প্রতি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্মাণাধীন অরক্ষিত খোলা ড্রেনে পড়ে কবি, ছড়াকার ও সাবেক শিক্ষক নেতা আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত এ মানববন্ধনে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উন্নয়নের নামে রক্তের খেলা বন্ধ করতে হবে। লাশের উপর দিয়ে উন্নয়ন চাই না। নাগরিক জীবনে উন্নয়ন একটি অপরিহার্য বিষয় হলেও সেটা পরিকল্পিতভাবে করতে হবে। তা না হলে বার বার রক্তপাত হবে। মানুষের মৃত্যু হবে, দীর্ঘদিনের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে শুষ্ক এ মৌসুমে মানুষের নানারকমের রোগবালাই দেখা দেবে। তাই মেয়র মহোদয়কে অবশ্যই পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। তা না হলে কবি বাসিতের মৃত্যুর মতো আরও অনেক ঘটনা এ নগরে ঘটবে।
এসময় বক্তারা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পরিবেশ বিধ্বংসী নানা কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে পুকুর ভরাট করা হয়েছে। শহিদমিনারের অভ্যন্তরে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এরপর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সিলেট নগরীকে সবুজের নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শহিদমিনারের সামনের সড়কের বিভাজকে গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে এখন গ্রিল লাগানো হচ্ছে।
বক্তারা অবিলম্বে সিলেট নগরীর সকল খোলা ড্রেন বন্ধ করার দাবি জানান। একই সঙ্গে নিহত আব্দুল বাসিতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে কবি আব্দুল বাছিত মোহাম্মদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর ছোট ভাই মোহাম্মদ এহিয়া আহমেদ বলেন, আমার পরিবারের মতো এই নগরীর অপরিকল্পিত উন্নয়নে আর কেউ যেন প্রিয়জনকে না হারান সেই দাবি জানাই।
মূল বক্তব্যে সংগঠনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, দুর্ঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হতে চললো। সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে অদ্যাবধি এই দুর্ঘটনার দায় স্বীকার করে কবির পরিবারকে আনুষ্ঠানিক সমবেদনা প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি আহত কবিকে উন্নত চিকিৎসা প্রদানে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতার কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। আর এমন হওয়ার কারণ নাগরিকদের নীরবতা। এই দুর্ঘটনার সাথে সাথেই কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল। তাহলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য কবির পরিবারের সামনে হাজির হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জোড় হাতে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। কিন্তু তা হয়নি। এ অবস্থায় সিলেটের নাগরিকদের সংগঠন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন এই সংক্ষুব্ধ নাগরিকবন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি আল-আজাদের সভাপতিত্বে ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন’র (ইমজা) সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রীর সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য দেন, সাংস্কৃতিক সংগঠক এনামুল মুনির, ভাষা শহিদ মতিন উদ্দিন চৌধুরী যাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রাহক ডা. মোস্তাফা শাহজামান চৌধুরী বাহার, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিধান সরকার, দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র সংগঠক দেবাশিষ দেবু, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রণব কান্তি দেব, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, মহানগর জাসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, লেখক ও আইনজীবী আব্দুল মুকিত অপি, প্রকাশক রাজিব চৌধুরী, সাংস্কৃতিক কর্মী রাজীব রাসেল, অদিতি দাস, রুবেল মিয়া প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আম্বরখানায় নির্মাণাধীন একটি ড্রেনে পড়ে পেটে রড ঢুকে গুরুতর আহত হন কবি ও ছড়াকার আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ। এরপর দুইদিন সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) তাঁর মৃত্যু হয়। কবির মৃত্যুর পর সিসিক’র পক্ষ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি