ওসমানী হাসপাতালের ওষুধ ফার্মেসিতে বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক ;
  • প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ৮:৫৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

ভরসা হারাচ্ছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা গরীব ও অসহায় মানুষ। হাসপাতাল কেন্দ্রীক একাধিক দালাল চক্রের কারণে মানুষের ভরসার জায়গাটি নষ্ট হচ্ছে। ওসমানী হাসপাতালে রোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য আসা সরকারি ওষুধ বিক্রি হচ্ছে হাসপাতালে বাইরের ফার্মেসিতে।

এছাড়াও চিকিৎসকদের পরামর্শে ক্রয় করা রোগীর ওষুধ চুরি করছেন হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারী। এতে করে সিলেটের বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষ সরকারি ওষুধ পাচ্ছেন না, যার প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যসেবার মানে। এই বিষয়গুলো যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জানা নেই তা নয়, কিন্তু তারা নিরব। পুলিশের নীরবতাও রহস্যজনক।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের নীরবতার বিষয়টি ভুক্তভোগীদের নজরে এসেছে মেডিকেলের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের ওষুধ চুরির একটি মামলার ধীর গতির প্রেক্ষিতে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার দিন দুজনকে গ্রেফতার করলেও ২১ দিন পেরিয়ে গেলেও আরও ৫ আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। অধরা রয়েছেন ওসমানী মেডিকেল রোডের ফোর ব্রাদার্স ফার্মেসির মানিক, খোকন ও শিপু।

এছাড়াও ওসমানী মেডিকেল রোডের আতিয়া ফার্মেসির বাবুল মিয়া ও ফেঞ্চুগঞ্জ ফার্মেসির মালিক কয়েস মিয়া অধরা রয়েছেন। তবে গ্রেপ্তারকৃত পান্না দাস ও শিপন আহমদ ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ওষুধ চুরির ঘটনায় গত ২৮ ডিসেম্বর কোতোয়ালি থানায় এটিএসআই জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৭ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় আসামী করা হয় কনাইঘাটের করগড়ী গ্রামের দিলিপ কুমার দাসের ছেলে পান্না দাস (২৮), মোগলাবাজার থানাধীন স্বর্ণগ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে শিপন আহমদ (২৩), ওসমানী মেডিকেল রোডের ফোর ব্রাদার্স ফার্মেসির মানিক (২৮), একই ফর্মেসির খোকন (২৮), একই ফর্মেসির শিপু (২৮), ওসমানী মেডিকেল রোডের আতিয়া ফার্মেসির বাবুল মিয়া (৩৮), একই রোডের ফেঞ্চুগঞ্জ ফার্মেসির মালিক কয়েস মিয়াকে (৩৫) ।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন থেকে ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট থেকে রোগীদের ক্রয়কৃত ওষুধ চোরাইভাবে সংগ্রহ করে আসছে মেডিকেল রোডের ফোর ব্রাদার্স ফর্মেসি, আতিয়া ফর্মেসি ও ফেঞ্চুগঞ্জ ফর্মেসিসহ প্রায় ১০টি ফর্মেসি। গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে ওসমানী মেডিকেলের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগ থেকে চোরাই ওষধ নিয়ে আসার সময় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

এসময় পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে অপরাশেনের ৫টি সুতা, ২৫টি প্লাস্টার ব্যান্ডেজ, ৬টি স্কচটেপ, ৫টি আইজি ইনঞ্জেকশন, হেক্সিসক্রাব কপি ক্লিনার নামক ৬টি সেনিটাইজার উদ্ধার করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকোতোয়ালি থানার সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুল মান্নানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সার্বিক বিষয় অবগত হওয়ার পর ব্যস্ত আছেন বলে এ নিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এদিকে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর সিলেট অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আবদুল মোমেনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন শিপন আহমদ। এসময় তিনি আদালতকে জানান, সিলেট ওসমানী মেডিকেলের জরুরী বিভাগে ওয়ার্ড বয় হিসেবে কাজ করে আসছেন। পরে কাজ শেখার জন্য হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে যান তিনি। ওই বিভাগে বিভিন্ন সময়ে (শিফট অনুসারে) দায়িত্ব পালন করেন। রাত ৮ট থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেন তিনি। শিপন জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, আমি দায়িত্বপালন করার পূর্বে সুজন, সেলিম, মঞ্জু ও সোহেল দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। গত ২৮ ডিসেম্বর ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে দায়িত্ব পালন করার সময় সুজন একটি ব্যাগ দেখিয়ে বলেছে ব্রাদার্স ফার্মেসি থেকে একজন লোক আসবে ব্যাগটি নিতে। কিছুক্ষণ পর ব্রাদার্স ফর্মেসি থেকে সুজন ও খোকন নামের দুজন লোক আসে ব্যাগটি নিতে। আমি তাদেরকে ব্যাগ দেখিয়ে দিলে তারা দ্রুত ব্যাগটি নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে শুনতে পাই ব্যাগসহ পান্না ধরা পড়েছে পুলিশের কাছে। এসময় খোকন পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ব্যাগের ভেতর থেকে অপরেশনের সুতা, প্লাস্টার ব্যান্ডেজসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ উদ্ধার করে। এই সকল ওষধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসে।

একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন পান্না দাস। তিনি তার জবানবন্দিতে বলেন, হাসপাতাল থেকে ওষধ নিয়ে আসার জন্য খোকন (ফোর ব্রাদার্স ফর্মেসি) মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে নিয়ে যায়। ওই বিভাগে দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ড বয় শিপনের কাছে ব্যাগের বিষয়ে খোকন জানতে চাইলে তখন শিপন ব্যাগটি দেখিয়ে দেয়।

এসময় খোকন ব্যাগটি হাতে নিয়ে আমার হাতে ব্যাগটি ধরিয়ে দেয়। ব্যাগটি নিয়ে বের হওয়ার সময় হাসপাতালের গেইটে আসামাত্র পুলিশ আমাকে আটক করে। তখন আমি পুলিশকে সার্বিক বিষয় বলার পাশাপাশি শিপন ও খোকনের নাম বলি।

এসকল ওষুধ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের স্বজনদেরকে দিয়ে ফর্মেসি থেকে বেশী করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে অতিরিক্ত ওষুধ ওই ফর্মেসিতে পূনরায় বিক্রি করা হয়। আমার আটকের খবর পেয়ে খোকন পালিয়ে যায়।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি