ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহ দিবস আজ

প্রতিনিধি, বিয়ানীবাজার ;
  • প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২০, ৬:৫৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

ঐতিহাসিক ‘নানকার বিদ্রোহ দিবস’ আজ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের জমিদার প্রথার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সংগ্রামের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই নানকার বিদ্রোহ। ব্রিটিশ আমলে নান অর্থাৎ রুটি দিয়ে কেনা গোলামকে ‘নানকার’ বলা হতো। এ প্রথায় জমিদাররা কৃষকদের গোলাম করে রেখেছিল। এর বিরুদ্ধে সিলেট অঞ্চলে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে কৃষকরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। 

আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট পুলিশ, ইপিআর ও জমিদারদের পেটোয়া বাহিনী বিয়ানীবাজারের শানেশ্বর ও উলুউরি গ্রামের মধ্যবর্তী সুনাই নদীর তীরে আন্দোলনরত কৃষকদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে শহীদ হন ব্রজনাথ দাস চটই, প্রসন্ন কুমার দাস, পবিত্র কুমার দাস ও কটুমণি দাস। অমূল্য কুমার দাস গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার হন এবং বন্দি  অবস্থায় দু’দিন পর জেলে মারা যান। এর আগে শানেশ্বর বাজারে পুলিশ ও জমিদার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারান রজনী দাস। নানকার আন্দোলনের এ শহীদদের স্মরণে প্রতি বছরের ১৮ আগস্ট নানকার বিদ্রোহ দিবস পালন করা হয়।

‘নান’ শব্দের অর্থ ‘রুটি’। রুটি দিয়ে অর্থাৎ খাবার দেওয়ার বিনিময়ে কেনা গোলাম। এরাই নানকার। সামন্তবাদী এই ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল সিলেট অঞ্চলে। নানকার প্রজারা জমিদারের দেওয়া বাড়ি ও সামান্য কৃষিজমি ভোগ করত। কিন্তু ওই জমি ও বাড়ির ওপর তাদের কোনো মালিকানা ছিল না। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধলে আন্দোলন সংগঠিত করে কমিউনিস্ট পার্টির পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষক সমিতি। প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা কমরেড অজয় ভট্টাচার্য।

আন্দোলন দমনের চেষ্টার এক পর্যায়ে ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট সরকারের পুলিশ, ইপিআর ও জমিদারদের পেটোয়া বাহিনী শানেশ্বর ও উলুউরি গ্রামের মধ্যবর্তী সুনাই নদীর তীরে কৃষকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূচনা ঘটে এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের। সরকারি বাহিনীর গুলিবর্ষণে নিহত হন উলুউরি গ্রামের ব্রজনাথ দাস চটই, দুই ভাই প্রসন্ন কুমার দাস ও পবিত্র কুমার দাস এবং মিয়ারী গ্রামের কটুমণি দাস। রামধন দাসের তরুণ পুত্র অমূল্য কুমার দাস সেদিন ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে পুলিশের হাতে বন্দি হয়েছিলেন। তাঁকে জেলে পুরে রাখা হয়। দুদিন পর সিলেট জেলে বন্দি অবস্থায়ই তাঁর মৃত্যু হয়। জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে এরও আগে শানেশ্বর বাজারে পুলিশ ও জমিদার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারান রজনী দাস। ১৮ আগস্টের ওই ঘটনায় আটক করে বিচারের মুখোমুখি করা হয় ৪৯ জন কৃষক ও আন্দোলনকারীকে।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালে সরকার জমিদারি প্রথা বাতিল করলে রদ হয় নানকার প্রথা আর কৃষকরা জমির মালিকানার স্বীকৃতি পায়।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি