সব
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে আলোচিত গৃহবধূকে গণধর্ষণের মামলার বিচারিক আদালত পরিবর্তন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন বাদি পক্ষ। আবেদনে দৃষ্টি না দিয়ে গণধর্ষণের ঘটনায় করা মামলায় ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির বিচার একসঙ্গে একই আদালতে কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য গণধর্ষণ মামলার ৮ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। উচ্চ আদালতে আদালত পরিবর্তনের আবেদনের প্রেক্ষিতে সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক মামলার সাক্ষ্য নেননি।
বিষয়টি একাত্তরের কথাকে নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, বাদী ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা থেকে বিচারিক আদালত পরিবর্তনের আবেদন করেছেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫২৬ ধারায় আদালত পরিবর্তনের এই আবেদন করা হয়। আবেদনে সিলেটের অন্য কোনো ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য মামলাটি যেন বদলির আদেশ দেয়া হয়- সে প্রার্থনা করা হয়েছে। রোববার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের কথা ছিল।
তিনি বলেন, বিষয়টি হাইকোর্টে থাকায় রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) আদালতে সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। আমরা আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সময় চেয়েছি। আদালত আমাদের যুক্তিসময় দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ সংক্রান্তে আদেশ বিকেলে দিবেন।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ধর্ষণের মামলার বিচারিক আদালত পরিবর্তন চেয়ে এই আবেদনটি অ্যাডমিশন করা হয়েছে। রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) আলোচিত ধর্ষণ মামলার আদালত পরিবর্তন করার শুনানী শেষে সিদ্ধান্ত দেন হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালত, আদালত পরিবর্তনে আবেদনে কোনো সাড়া দেননি। বরং একই আদালতে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ দেন। একইসঙ্গে মামলার বাদী, সাক্ষী ও বাদীপক্ষের আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিলেট পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, কোনো আসামির আইনজীবী না থাকলে তাকে আইনজীবী দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে উচ্চ আদালতের আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার সাবরিনা জেরিন ও ব্যারিস্টার এম আব্দুল কাইয়ুম লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
ব্যারিস্টার এম আব্দুল কাইয়ুম লিটন বলেন, ‘ওই ঘটনায় করা মামলার দুই ধারায় চার্জশিট দেয় পুলিশ। ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়। তখন আমরা বলেছি, দু’টি অভিযোগের বিচার একসঙ্গে হোক, কিন্তু ২৪ জানুয়ারি আমাদের সে আবেদন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাকচ করে দেন। এরপর আমরা হাইকোর্টে আবেদন করি।’
তিনি বলেন, ‘আজ (৭ ফেব্রুয়ারি) শুনানি শেষে হাইকোর্ট দুই অভিযোগের বিচার একই আদালতে করতে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে মামলার বাদী, সাক্ষী ও বাদীপক্ষের আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিলেট পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কোনো আসামির আইনজীবী না থাকলে তাকে আইনজীবী দিতে বলা হয়েছে।’
জানা যায়, গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে এমসি কলেজে বেড়াতে আসেন ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ। এ সময় ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ওই গৃহবধূকে স্বামীসহ কলেজ ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতে গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় এজাহার নামীয় আসামি করা হয় ৬ জনকে। সেই সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামী করা হয়।
আসামিরা হচ্ছে, ছাত্রলীগ নেতা এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান।
উল্লেখ্য, এই মামলায় গত ৩ ডিসেম্বর সাইফুরসহ ছাত্রলীগের ৮জন নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে আদালতে ধর্ষণ ও চাঁদাবাজিসহ ছিনতাইয়ের ঘটনায় পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রগুলো দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার ওসি (তদন্ত) ইন্দ্রনিল ভট্টাচার্য। পরে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক চৌধুরী ধর্ষণ মামলার অভিযোগ গঠন করেন। আর ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগপত্রটি একই আদালতে বিচারশুরু না হওয়ায় বাদী পক্ষের আইনজীবী দুটি অভিযোগপত্রে বিচার শুরু করার জন্য আবেদন করলে আদালত তা না মঞ্জুর করেন। পরে মামলার বাদী আদালত পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি