সব
ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’– মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা ও সংগীত পরিচালক আলম খানের সুরে গানটি গেয়ে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে গেছেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর।
দয়ালের সেই ডাকে সাড়া দিয়েই আবার তিনি চলে গেলেন অন্তিম পরপারে।
আমার সারা দেহ খেয়ে গো মাটি, এই চোখ দুটি মাটি খেও না, আমি মরে গেলেও তারে দেখার স্বাদ মিটবে না গো মিটবে না’– অসাধারণ এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী, সুরের জাদুকর, মুকুটহীন প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুর খবরে কানাডাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
তার মৃত্যুর খবর সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রাণপ্রিয় এই শিল্পীকে সামনে থেকে দেখতে না পেলেও প্রবাসীরা সারাদিনই শিল্পীর ছবির পাশাপাশি নিজের ছবি দিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। বাংলাদেশের আধুনিক ও চলচ্চিত্রজগতের কালজয়ী অনেক গান তার কণ্ঠে সমৃদ্ধ হয়েছে। সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, প্রেম-বিরহ— সব অনুভূতির গানই তিনি গেয়েছেন।
এন্ড্রু কিশোরের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘জীবনের গল্প/আছে বাকি অল্প’, ‘হায় রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যিখানে’, ‘তুমি যেখানে/আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না তোমার তুলনা’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি আমার জীবন/ আমি তোমার জীবন’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু ভালোবাসা পেলাম না’, ‘তুমি আমার কত চেনা’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’,‘এইখানে দুইজনে নির্জনে’সহ অনেক গান। জীবনের বেশিরভাগ সময়ে মূলত চলচ্চিত্রে গান করেই কাটিয়েছেন।
দীর্ঘদিন পুরোদস্তুর পেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে দুই বাংলায় গান করেছেন এন্ড্রু কিশোর। একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি।
চলচ্চিত্রে তিনি ১৯৭৭ সালে ‘মেইল ট্রেন’ ছবিতে প্রথম গেয়েছিলেন ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানটি। চলচ্চিত্রে এটিই ছিল তার প্রথম গান।
তার মৃত্যুতে কানাডার বিভিন্ন সংগঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন।
ক্যালগিরির আনন্দধারা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি নাজনীন নেওয়াজ বললেন- আমরা শোকাহত, আমাদের দেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে হারিয়ে।
আধুনিক গানে প্রখ্যাত শিল্পী এন্ড্রু কিশোর এক নতুনমাত্রা যুক্ত করেছিলেন। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর শিল্পীদের সাংস্কৃতিক বলয়ে আমরা যখন আবিষ্ট ছিলাম, ঠিক সেই সময়টাতেই এই কিংবদন্তির মোহময় কণ্ঠের টানে আমরা আমাদের নিজেদের গানকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম।
এই প্রথিতযশা সংগীতশিল্পীর আত্মার শান্তি কামনা করছি, যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।
বাংলাদেশ-কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগিরির সহসভাপতি ও মাউন্ট রয়েল ইউনিভার্সিটির শাস্ত্রীয় সংগীত শিক্ষিকা রীতা কর্মকার বলেন- এন্ড্রু কিশোর শুধু একজন সংগীতশিল্পী নন, তিনি নিজেই একটি সংগীত প্রতিষ্ঠান।
তিনি একটি যুগের প্রতিনিধিত্ব করতেন। তার মৃত্যু বাংলাদেশের সংগীতের সেই যুগেরই একটি বড় অংশের প্রস্থানবার্তা। তিনি ক্যালগিরিতে এসেছিলেন, তখন তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে।
সেই সময়ই উপলব্ধি করতে পেরেছি তিনি এত বড় একজন শিল্পী হওয়া সত্বেও কত বিনয়ী এবং মাটির কত কাছাকাছি একজন মানুষ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে তিনি একজন মুকুটহীন সম্রাট, তার গান টিকে থাকবে বহুকাল।
গানের ভুবন মিউজিক অ্যান্ড কালচারাল ইনস্টিটিউট অব ক্যালগিরির সভাপতি জয়শ্রী সেন বলেন, চলে গেলেন এক কিংবদন্তি। যিনি জেগে থাকবেন বাংলা গানের জগতে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে।
তিনি ছিলেন আমাদের কাছে কিশোর দাদা। আমি পাবনার মেয়ে, তবে বাবার চাকরি এবং আমার লেখাপড়া সূত্রে রাজশাহীতে কেটেছে জীবনে সুবর্ণ সময়।
সেই সময়ই তাকে প্রথম দেখেছি বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কার্যালয়ে। তার পর খুব কাছ থেকে দেখার এবং পাশে বসে গান শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল ১৯৯৪ সালে।
সামনাসামনি বসে এক ঘরোয়া আড্ডায় আমাদের খালি গলায় শুনিয়ে ছিলেন– ‘আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি’ সেই স্মৃতি আমার জীবনে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে আজীবন।
ক্যালগিরির বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সোহাগ হাসান বললেন, বাংলা গানের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ডু কিশোরের অকাল প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করছি। আধুনিক ও চলচ্চিত্র জগতের কালজয়ী অনেক গান তার কণ্ঠে সমৃদ্ধ হয়েছে। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
ক্যালগিরির সৈয়দা রওনক জাহান বলেন, একজন কিংবদন্তির প্রয়াণ। যিনি আটবার জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। হাজারও ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
ক্যালগিরির কবিতালোকের সভাপতি বায়েজিদ গালিব বলেন, বাংলাদেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যু, সংগীতজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন।
দেশ ও জাতি হারাল একজন প্রথিতযশা শিল্পীকে। তার অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি।
অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার্স অব আলবার্টার সভাপতি সুব্রত বৈরাগী বলেন, সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ আর বিরহ¬ সব ধরনের গানই তিনি গেয়েছেন। তিনি আমাদের হৃদয়ের মাঝে থাকবেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার্স অব আলবার্টার ডিরেক্টর অব ইয়ুথ, চিলড্রেন অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স খায়ের খোন্দকার বলেন, দাদা আমাদের খুবই কাছের মানুষ ছিলেন। আমরা সত্যিই অনেক অনেক শোকাহত।
ক্যালগিরির নাট্য সংগঠন মুক্তবিহঙ্গের সভাপতি জাহিদ হক বলেন, দুই বাংলার জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
এ ছাড়া বাংলাদেশ-কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগিরির সভাপতি ও সম্পাদক মো. রশিদ রিপন ও জয়ন্ত বসু, আলবার্টা আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. জাফর সেলিম, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আবদুল্লাহ রফিক পৃথক বিবৃতিতে কালজয়ী কিংবদন্তি এই শিল্পীর আত্মার শান্তি কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি