এখনও গ্রেপ্তার হয়নি রাহাত খুনের আসামিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ;
  • প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১০:৩৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা কলেজছাত্র আরিফুল ইসলাম রাহাত হত্যাকাণ্ডের চারদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনও আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে হতাশ রাহাতের পরিবার ও সহপাঠীরা।

ঘটনার চারদিনেও আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিচার পাওয়া নিয়েও শঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা। আর পুলিশ বলছে- আসামিদের বয়স কম হলেও প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের গভীর ধারণা রয়েছে। এজন্য পুলিশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

পরিবারের বলছে, জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা। যাতে করে এভাবে কেউ আর খুনের শিকার না হয়। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার না হলে কলেজ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন।

গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ সুরমা কলেজ গেটের সামনে খুন হন দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম রাহাত (১৮)। এরপর থেকেই কলেজের শিক্ষার্থীরা নানাভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। ঘটনার দিন থেকে চারদিন কলেজে পাঠদান বন্ধও ঘোষণা করা হয়। ঘটনার শুক্রবার (২২ অক্টোবর) রাতে নিহত রাহাতের চাচা শফিফুল ইসলাম বাদী হয়ে তিনজনের নামোল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাত আরও ৫-৭ জনকে আসামি করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই আসামিদের গ্রেপ্তার করতে তৎপর রয়েছে পুলিশ। ওইদিনের পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এমনকি সকল মাধ্যমেই তাদের অবস্থান শনাক্ত করার কাজ চলমান রয়েছে। তবে এখনো আসামিদের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসামিদের বয়স কম হলেও তাদের প্রযুক্তিজ্ঞান খুব বেশি রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনও ধরণের ডিভাইস তারা ব্যবহার করছে না। পাশাপাশি পরিবারের কারও সঙ্গেও এখনো তারা কোনও ধরণের যোগাযোগ করছে না। যার কারণে প্রযুক্তি ব্যবহার করেও আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে পুলিশ, পিবিআই ও গোয়েন্দা সংস্থা তাদের গ্রেপ্তার করতে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের বলেন, এই ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশসহ সকলেই কাজ করে যাচ্ছেন আসামিদের গ্রেপ্তার করতে।

এদিকে, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ মো. শামসুল ইসলাম। এই বিষয়ে গতকাল রোববার (২৪ অক্টোবর) কলেজ ক্যাম্পাসে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেন তিনি। এতে তিনি বলেন, কলেজ ছাত্র আরিফুল ইসলাম রাহাত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার না করলে আন্দোলনে নামবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রাজপথে শিক্ষার্থীরা নেমে গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। এর দায়ভার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই বহন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাহাত অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। এবছর সে এইচএসসি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। তাকে নির্মমভাবে হত্যায় আমরা শোকাহত, ভাষা হারা। দক্ষিণসুরমা কলেজ প্রতিষ্ঠার পর এটি প্রথম হত্যাকাণ্ড। বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ড আমাদের অতীত ঐতিহ্য ম্লান করে দিয়েছে।

কলেজ অধ্যক্ষ মো. শামসুল ইসলাম বলেন, রাহাত হত্যাকাণ্ডের দিন সভা করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। আজ সোমবার দুপুরে সেটি আমার হাতে এসে পৌঁছেছে। এখনও প্রতিবেদনটি খুলে দেখিনি। একটু পরই খুলে দেখবো।

আগামী ৩০ অক্টেবার রাহাত স্মরণে শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আরও দুইদিন কলেজে পাঠদান কর্মসূচি বন্ধ রেখেছি। শোকসভার মাধ্যমে আমরা কলেজের পাঠদান কর্মসূচি আবারও সচল করবো।

নিহত রাহাতের চাচা শফিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের একটাই দাবি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের কঠিন বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত তৈরি করা হোক। আজ সোমবার আমাদের এলাকার মুরব্বিরা বসে আন্দোলনের বিষয়ে আলাপ করব। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করলে সবাই মিলে পরবর্তীতে আন্দোলনের ডাক দিবো।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা কলেজ ছাত্র আরিফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। তবে তদন্ত স্বার্থে সেই তিনজনের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।

সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, আরিফ হত্যাকাণ্ডে এখনো কোনও আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারের কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি