সব
দেশে করোনা সংক্রমণের চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কাটেনি আতঙ্ক। সামান্য সর্দি-জ্বর বা গলাব্যথা হলে এখনও অনেকে ভয় পেয়ে যান। এসব উপসর্গ দেখা দিলেই করোনা হয়েছে এমন নয়। সম্প্রতি গলাব্যথা হলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। তবে গলাব্যথা হলে ভয় পাবেন না। কারণ গলাব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে।
করোনায় গলাব্যথা
করোনাভাইরাসের কারণে গলাব্যথা হলে সঙ্গে শরীরে ব্যথা (শতকরা ৮৭ ভাগ ক্ষেত্রে) থাকবে। এ ছাড়া এই গলাব্যথায় টনসিলে কোনো সাদা পুজ থাকবে না। ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে জ্বর হালকা থেকে মারাত্মক হতে পারে। করোনা ভাইরাস এর কারণে গলা ব্যাথায় কানে ব্যাথা থাকেনা; কিন্তু টনসিলের প্রদাহ জনিত গলা ব্যাথায় সাথে কানে ব্যাথা থাকে।
গলাব্যথা কেন হয়:-
টনসিল এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি বা লিস্ফয়েড টিস্যু। এতে কোনো প্রকার ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে আমরা এটিকে টনসিলাইটিস বলি। গলার ভেতরে দুপাশে একজোড়া Palatine tonsil থাকে। টনসিলের প্রদাহ বলতে আমরা এর ইনফেকশনকেই বুঝে থাকি। টনসিলের ইনফেকশন একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা।
টনসিল ইনফেকশন হয়ে থাকে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার কারণে। যার ফলে গলাব্যথা হয়ে থাকে।
আরও যেসব কারণ রয়েছে:-
১. অধিকাংশ গলার ব্যথার কারণ ভাইরাসের সংক্রমণ। ফ্যারেঞ্জাইটিস, টনসিলাইটিস ও ল্যারিঞ্জাইটিস ভাইরাসের কারণে হয়। গলাব্যথা হলে ভাইরাল জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় জ্বর হতে পারে।
২. হাম, চিকেন পক্স হলে গলায় তীব্র ব্যথা হয় এবং খেতেও খুব কষ্ট হয়।
৩. ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণেও গলাব্যথা হয়। স্ট্রেপ্টোকক্কাস জাতীয় জীবাণুর আক্রমণে আমরা টনসিলে আক্রান্ত হয়ে থাকি। শিশুরা এই অসুখে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে টনসিলের চারপাশের খাজে সাদা পুজ দেখা যায়।
৪. সিগারেট বা অন্য রাসায়নিকের কারণে গলাব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া দূষণের কারণেও গলায় সমস্যা হয়।
৫. পেরিটনসিলাইটিস, গ্যাস্ট্রোএসোফেগিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইআরডি), এপিগ্লটাইটিস— এই ধরনের কিছু অসুখে গলাব্যথা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঢোক গিলতে সমস্যা, গলায় জ্বালা জ্বালা ভাব ও কথা বলতেও সমস্যা হতে পারে।
গলাব্যথা হলে যা করবেন:
গলাব্যথা শুরু হলেই সামান্য উষ্ণ লবণপানি দিয়ে গড়গড়া করুন। লবণপানি টনসিলের চারপাশে রক্তসঞ্চালক বাড়িয়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, উষ্ণ পানি দিয়ে গড়গড়া করলে গলায় ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের আশঙ্কাও অনেক কমিয়ে দেয়।গরম লাল চায়ের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
গলাব্যথা হলেই প্রথম থেকেই আধা গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানিতে ২ চামচ পরিমাণ ১ শতাংশ পভিসেপ আয়োডিন সল্যুশন মাউথওয়াশ মিশিয়ে গড়গড়া শুরু করে দিতে পারেন। দিনে ৩-৪ বার মাউথওয়াশ দিয়ে গড়গড়া করবেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, এ মাউথওয়াশ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাথমিক পর্যায়ে শতভাগ কার্যকরী।
এ সময়ে দীর্ঘক্ষণ এসি ব্যবহার ও ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ডা. মো. আবদুল হাফিজ শাফী, বিসিএস (স্বাস্থ্য),
নাক-কান-গলা বিভাগ, বিএসএমএমইউ (প্রেষণে), ঢাকা
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি