সব
সিলেট এবং সুনামগঞ্জ জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে সিলেট অঞ্চলের সুরমাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে হাওরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। তাই সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু উজানে হতে পারে বৃষ্টি। ফলে সিলেটে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে কৃষকদের মধ্যে। ইতোমধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জের অনেক নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।
জানা গেছে, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করেছে উজানের ঢলে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গোয়াইনঘাটে দেখা দিয়েছে আগাম বন্যা। তলিয়ে গেছে কৃষকের রূপায়িত কয়েক শ হেক্টর জমির বোরো ধান। আবার কোথাও রাস্তাঘাট তলিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পূর্ব জাফলং এলাকা বেশি প্লাবিত হয়েছে।
জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় গত তিন দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারী ও বড় নয়াগং, রাংপানি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টিপাত ও পাড়াড়ি ঢল আসা অব্যাহত থাকলে দু-একদিনের মধ্যেই সব ক’টি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে।
স্থানীয়রা জানান, তিন দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও বোরো ধান। এসব এলাকার লোকজন আশ্রয়ের জন্য ছুটছেন অন্যত্র। জৈন্তাপুরে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো হলো- মেঘলী, বন্দরহাটি, লামাপাড়া, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, মজুমদারপাড়া, নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, তিলকৈপাড়া, বড়খেল, ফুলবাড়ী, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, হেলিরাই, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, লামনীগ্রাম, খারুবিল, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১নং লক্ষীপুর, ২নং লক্ষীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, কাঠালবাড়ী, নলজুরী হাওর, বালিদাঁড়া, রামপ্রসাদ, থুবাং, বাউরভাগ উত্তর, বাউরভাগ দক্ষিণ সহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার সর্ববৃহৎ সারী নদী ও বড় নয়াগাং নদী এবং রাংপানি নদীর পানি বিপদসীমার নিকটে চলে এসেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং জনসাধারনকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে, উজানের পানির চাপে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের নজরখালী বাঁধ ভেঙে শনিবার সকাল থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে। ফাটল দেখা দিয়েছে আরও কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধে। এসব কারণে হাওর এলাকার কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে। তবে এখনই বন্যার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে। আবার উজানে ভারি বৃষ্টিপাত হলে যে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে সে বিষয়টিও উল্লেখ করেছে অধিদপ্তর।
জানা যায়, সিলেট অঞ্চলে প্রতি বছরের মার্চ থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলেও সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ে বৃষ্টি হয় বেশি। সে সময় পাহাড় থেকে ঢল এসে নামে হাওর এলাকায়। এতে মার্চ এপ্রিলে দেখা দেয় আগাম বন্যা।
সিলেট জেলায় এবার ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে জানিয়ে জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাজী মজিবুর রহমান বলেন, ঢলে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় কিছু ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে তা খুব বেশি নয়। দুইশ’ হেক্টরের মতো ডুবেছে বলে শুনেছি। তবে পুরো হিসেব এখনও পাইনি।
তিনি বলেন, পাহাড়ে বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা আগের চাইতে কম। তবে উজানে এখন বৃষ্টিপাত কম থাকলেও তা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এতে সিলেটের নিম্নাঞ্চলে বাড়তে পারে পানি।’
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি