সব
অসহায় মানুষ যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে দিকে সকলকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির মো. আবদুল হামিদ। শনিবার সকালে বঙ্গভবন থেকে ঈদের নামাজ শেষে বাংলাদেশ টেলিভিশিনের (বিটিভি) মাধ্যমে তিনি এই বার্তা দেন।
ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন- পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমি দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলিম ভাইবোনকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। ঈদ মুসলমানদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ বড় ধর্মীয় উৎসব। প্রতিটি মুসলমান এ দিনটির জন্য বছরব্যাপী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। ঈদে সে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড় নির্বিশেষে সবার মধ্যে। ঈদ আমাদের জন্য আনন্দ আর উৎসবের বার্তার পাশাপাশি ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে বাস্তবায়নযোগ্য অনেক শিক্ষনীয় বার্তা নিয়ে আসে।
কোরবানি আমাদের ত্যাগ ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল পবিত্র ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে উদ্যোগী হয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালবাসা, আনুগত্য ও আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা অতুলনীয়। আল্লাহর প্রতি এ অকৃত্রিম ভালবাসা ও ত্যাগের আদর্শ আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হলেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে সহমর্মিতা। কোরবানির আদর্শ ও মর্মার্থ অনুধাবন করে সমাজে শান্তি, সৌহার্দ্য ও কল্যাণের পথ রচনা করতে আমাদের সংযম ও ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতায় উজ্জীবিত হতে হবে। ত্যাগের মনোভাবকে প্রসারিত করতে হবে আমাদের কর্মে ও চিন্তায়।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় অনেক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। সরকার বানভাসি এসব মানুষের জন্য খাদ্য ও নগদ আর্থিক সহায়তাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। অসহায় জনগণ যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে দিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। ঈদের আনন্দকে নিজের ও পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বিত্তবান ও সামর্থ্যবান সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বন্যার্তরাও যাতে ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে, সে ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে কাজ করতে হবে, যোগ করেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি আরো বলেন, ধর্ম মানুষকে কল্যাণ ও আলোর পথ দেখায়। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা ও আচার-আচরণ সমাজে আলোকিত মানুষ তৈরি করে। সমাজ থেকে অন্ধকার ও কুসংস্কার দুর করে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে গড়ে তোলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য বন্ধন। তাই আসুন কোরবানির শিক্ষা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করি। এ বছর এমন একটা সময়ে ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন মহামারি করোনার ছোবলে বিশ্ববাসী বিপর্যস্ত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কর্মহীন হয়ে অনেক মানুষই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মানবিকতাকে যেন আমরা ভুলে না যাই।
করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পরিচর্যায় ডাক্তার-নার্সদের পাশাপাশি পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনসহ সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং জীবনযাপনে ও চলাফেরায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজে সুস্থ থাকি, অন্যকেও সুস্থ রাখি-এটাই হোক সবার অঙ্গীকার।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় সামর্থ্যবান সবাই কোরবানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু কোরবানি করতে গিয়ে আমরা যেন পরিবেশ ও প্রতিবেশীদের সমস্যার কারণ না হয়ে উঠি, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাই আমি আশা করব, আপনারা সরকার নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করবেন এবং কোরবানির বর্জ্য অপসারণসহ প্রতিটি কার্যক্রম করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্পন্ন করবেন। পবিত্র ঈদুল আজহা সবার জন্য বয়ে আনুক কল্যাণ, সবার মধ্যে জেগে উঠুক ত্যাগের আদর্শ- মহান আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা করি।
প্রসঙ্গত, প্রতি ঈদে জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি ঈদের নামাজ পড়লেও করোনার বিস্তার ঠেকাতে রোজার ঈদের মত এবারও খোলা জায়গায় জামাতের আয়োজন ছিল না।
সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে পরিবারের সদস্য এবং ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে ঈদের নামাজ পড়েন রাষ্ট্রপতি হামিদ।
এমনিতে প্রতি ঈদে বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপ্রধান। এবার ঈদে বঙ্গভবনে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বাদ দেওয়া হয়েছে।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি