সব
করোনায় বিপর্যস্ত বিভিন্ন খাতের মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দর্জিরা রয়েছেন বেহাল দশায়। আয় – রোজগার প্রায় নেই বললেই চলে। শ্রীমঙ্গলের শতাধিক দর্জির অবস্থা এতোই খারাপ যে ঘরভাড়া পর্যন্ত বের করতে পারছেন না সীমিত আয় থেকে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। আয়ের সাথে ব্যয়ের আকাশ – পাতাল তারতম্যের কারনে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ছে। সাথে যোগ হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের বকেয়া বিল, সেখানেও বিপত্তি ভুতুড়ে বিল নিয়ে অনেকেই ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বাধ্য হয়ে গৃহপালিত পশু বিক্রি করে আপাতত অনেকেই সংসার কোনও মতে চালাচ্ছেন তবে এই অবস্থা চলতে থাকলে আর কতদিন এভাবে টেনেটুনে চলতে পারবেন সেটাই সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হয়ে পড়েছে তাদের। তারা বলছেন মহামারীর আঘাতটা সমাজের ধনিক শ্রেণীর মানুষ ততটা টের না পেলেও তারা পাচ্ছেন ভালো মতোই। সীমিত অর্থনৈতিক আয়ের শর্তসাপেক্ষ সময়ে তারা যা আয় করছেন এতে পরিবারের ভরণ – পোষন করাই অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। ব্যবসায় প্রতিষ্টান খোলা রাখার সময় বেঁধে দেওয়া হলেও, খরচ কমেনি এতটুকু। ঘর ভাড়া যেমন ছিলো তেমনই আছে বরঞ্চ বকেয়া ভাড়া নিয়ে আছেন দুঃশ্চিন্তায়। শহরের পৌর সুপার মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানালেন, ইতিমধ্যে মালিকপক্ষ ভাড়া প্রদানের জন্য বার বার তাগাদা দিচ্ছেন কিন্তু কোত্থেকে দিবেন সেটাই দুঃশ্চিন্তা। ভাড়া না দিতে পারলে ব্যবসাও করা যাবে না – দোকান বন্ধ করে দিতে হবে এমনও চাপ রয়েছে অনেকের উপর। অর্থাং, সবাই যার যার অবস্থান থেকে রয়েছে ব্যাপক চাপে। এ অবস্থায় সরকারী সহায়তা না পেলে তালে সামনের দিনগুলোতে চলা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়বে।
পৌর সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. সোহেল মিয়া জানালেন, ৮ বছর ধরে কাজ করছেন, দিনকাল ভালোই যাচ্ছিলো কিন্তু করোনার এই প্রাদুর্ভাবের কারনে বিগত রোজার ঈদ থেকে এ পর্যন্ত প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা আয় হলেও এবার তা নেমে এসেছে সর্বসাকুল্যে ৫ হাজার টাকায়। ভাবছিলাম হয়তো পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু যে অবস্থা চলতেছে তাতে বোধহয় সরকারের সহযোগীতা ছাড়া আমাদের চলার আর কোন পথ অবশিষ্ট থাকছে না।
একই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী তপন ও কাজল চক্রবর্তী ২ বছর যাবত দর্জি হিসেবে একই দোকানে কাজ করেন। ১০ সদস্যের পরিবারে মাত্র ২ জন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, কিন্তু বিগত ৪ মাস ধরে ছিলেন প্রায় বেকার অবস্থায়। তিনি জানালেন, ধার – দেনা করে এতদিন চলেছি, ভাবছিলাম এই ঈদে ভালো আয় রোজগার করে চুকিয়ে দেব কিন্তু যে অবস্থা তাতে আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোনও পথ নেই।
এনামুল হক টেইলার মাস্টার জানালেন, আগে যে পরিমান কাজের অর্ডার আসতো, সে অনুযায়ী এখন মাসে তার দশ ভাগের এক ভাগও কাজ আসে না। ফলে মাসিক আয় ২০ হাজার থেকে নেমে এখন ৪/৫ হাজার টাকায় এসে ঠেকেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কঠিন জীবনযাপন করছি। হাতের কাজ তাই আগের চেয়ে কাজের রেটও কমিয়ে দিয়েছি প্রায় অর্ধেক তবুও নেই কাষ্টমারের দেখা।
মো. আব্দুল হান্নান মিয়া বলেন, ৫ সদস্যের পরিবারের খাওয়া খরচ আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে। আয় নেই, যা কিছু সঞ্চয় ছিলো তা ভেঙে খেয়ে প্রায় শেষ। ঘর ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল বাকি। কাজ নেই, সেলাই মেশিন পড়ে আছে, কারিগরও রাখতে পারছি না। আগে ঈদের মৌসুমে কারিগর খোঁজে নিয়ে আসতে হত আর এবার নিজের হাতেই অফুরন্ত সময় কিন্তু নেই কাজ, নেই রুজি। কৃচ্ছতা সাধন করে আর কত চলবো।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, এখন তো সীমিত আকারে আয়ের সুযোগ রয়েছে। জীবন ও জীবিকা চালানো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কষ্ট হচ্ছে সেটা আমরা অনুধাবন করছি। সরকারী সহযোগীতা প্রাপ্তি সাপেক্ষে অবশ্যই তাদের সহযোগীতা করা হবে। এছাড়াও, আমি বিষয়টি আমলে নিয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করব যাতে করে দুর্বিপাকে পড়ে জীবনযাত্রা যাদের অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে অন্ততপক্ষে তাদের জন্য কিছু করা যায় কিনা।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি