সব
মো. রিপন আহমদ ও তাঁর স্ত্রী জোসনা আক্তার। পরিণত বয়সে দুজনের উচ্চতা চার ফুটের কম। তবে কারও দয়ার পাত্র হিসেবে বসে থাকেননি। কঠোর পরিশ্রম করে জীবন চালাতেন। এ জন্য সবার কাছে কর্মজীবী দম্পতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
কষ্টের জীবনসংগ্রামের প্রায় ১৮ বছর পর সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক লাগোয়া নিহারিপাড়ার মুখে ছোট্ট একটি দোকান দেন তাঁরা। নাম ‘রিপন স্টোর’। লকডাউন কাটিয়ে তিন মাস পর দোকান খোলেন। চেষ্টা ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। সব সঞ্চয় দিয়ে যেদিন দোকানে নতুন মালপত্র তোলা হলো, সেদিন রাতেই চুরি হয়। দোকানে রাখা নগদ ২০ হাজার টাকাসহ প্রায় ৭০ হাজার টাকার মালপত্র নিয়ে যায় চোরেরা।
দোকানে চুরির ঘটনাটি ঘটে ৫ জুলাই রাতে। এরপর দোকান বন্ধ ছিল টানা দুই সপ্তাহ। গত সোমবার দোকান খুলে আবার চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রিপন-জোসনা। দোকানে বসেই কথা হয় এই দম্পতির সঙ্গে। তাঁরা জানান, করোনাকালে দোকানে চুরির ঘটনাটি সঞ্চয়হারা করেছে, মনোবলও ভেঙে গেছে। চোর ধরা না পড়ায় আবার চুরি হয় কি না, এই ভয়েই এখন দিন কাটছে।
চুরির পরদিন সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। পুলিশ অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নিয়েছে। তাঁদের আশা ছিল, পুলিশ চোর ধরবে, মালপত্র, টাকাপয়সা কিছু না কিছু অন্তত উদ্ধার হবে। কিন্তু দুই সপ্তাহ অপেক্ষার পরও এমন কিছুই হয়নি।
নিহারিপাড়ার পূর্ব দিকে বৃহত্তর মদিনা মার্কেট এলাকা। সিলেট নগরীর পশ্চিম দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় মদিনা মার্কেট নগরীর অন্যতম বড় ব্যবসায়িক এলাকা হিসেবে পরিচিতি।
রিপন জানান, ব্যবসার কেন্দ্রস্থলের ওই এলাকায় টানা প্রায় ১৮ বছর রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় অস্থায়ীভাবে দোকানদারি করেছেন। তখন তাঁর দোকানের নাম ছিল ‘পানভান্ডার’। সেখানে চা-ও বিক্রি করতেন। ব্যবসাকে স্থায়ী করতে স্ত্রী জোসনার সঙ্গে মিলে গেল মার্চ মাসের শুরুতে নিহারিপাড়ার ‘তারা ম্যানশন’ নামের বিপণিবিতানে মাসিক সাড়ে ৭ হাজার টাকায় দোকান ভাড়া নেন। লকডাউন ঘোষণার আগে সপ্তাহ দুয়েক ব্যবসা ভালো হচ্ছিল। লকডাউনের মধ্যে নিত্যপণ্যের দোকান হিসেবে তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানদারি করে আয়রোজগারের মধ্যে ছিলেন। এ জন্য বড় কোনো আর্থিক টানাপোড়েনে পড়েননি। কারও কাছে হাত পাততে হয়নি।
দোকানের পেছনের মহল্লায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস রিপন-জোসনা দম্পতির। তাঁদের মূল বাড়ি নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা গ্রামে। বিয়ে হয় পারিবারিকভাবে ২০০৬ সালে। কোনো সন্তান নেই। জোসনা বলেন, টিনের চাল উপড়ে সিলিংয়ের এক দিক খুলে চোর দোকানে ঢুকে চুরি করেছে। রিপন বলেন, ‘আমি তালা খুলে দেখি, দোকানের ভেতরটা কেমন জানি আউলানো। দেখি সিলিং ভাঙা, দেইখা তো আমি বেহুঁশ। কোনো হুঁশবুশ আছিল না। বউ আইসা হুঁশ ফিরাইছে।’
কথার ফাঁকে ফাঁকে রিপনের দোকানদারিও চলছিল। কেটলিতে আগুন ছড়াচ্ছিলেন, চা বানাচ্ছিলেন। জোসনা বলেন, ‘চোরের দল আমরারে উলুঝাড়া (শেষ সঞ্চয়হারা) করল। লোকটা (রিপন) দোকানটাতে বেহুঁশ অইয়া পইড়া আছিল। কাজকামের মইধ্যে আছে ঠিক, এখনো ঠিকমতো হুঁশবুদ্ধি নাই তাঁর। দুইটা হপ্তা পার করে দোকান খুলছি। চোর ধরা পড়ল না, চুরির মালও বাইর অইল না। আরেকবার চুরি অয় কি না, হেই ডরেই দিন কাটছে আমরার।’
মদিনা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ জব্বার শাহী ২০০১ সাল থেকে রিপনকে চেনেন। তিনি বলেন, ছোট দোকান আর ছিঁচকে চুরির ঘটনায় পুলিশ হয়তো গা ছাড়া হয়ে জিডি নিয়েছে। চোর ধরা না পড়লে তাঁদের মনের ভয়টা কাটবে না মনে হয়।
চুরির অভিযোগ সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভুক্ত করা প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, জিডি হিসেবে নথিভুক্ত হলেও তদন্ত করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সূত্র- প্রথম আলো
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি