সব
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নে বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার তিন বছর পূর্তি হচ্ছে আজ মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট)। মানবিক কারণে তাদের সাময়িক আশ্রয় দিতে রাজি হলেও বিশ্ব সম্প্রদায়কে পাশে নিয়ে এ সমস্যার অতি সত্বর সমাধানে চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
মিয়ানমার সরকারের একের পর এক হঠকারিতার কারণে গত তিন বছরেও এ সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব না হলেও আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার করা মামলায় যে প্রাথমিক রায় হয়েছে তা মিয়ানমারকে চাপে ফেলেছে। ফলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক একাধিক চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক চাপের মাধ্যমে এ সমস্যার একটা সুষ্ঠু সমাধানে আশাবাদী সরকার। এজন্য যুদ্ধ ছাড়া সব ধরনের প্রচেষ্টা সরকার চালিয়ে যাচ্ছে, বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারির কারণে নিয়মিত বৈঠক না হলেও তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে। কাজ চলছে। করোনার মধ্যেই ৩০ হাজার রোহিঙ্গার ঠিকানা সম্বলিত তালিকা পাঠিয়েছে তারা। রোহিঙ্গাদের এদেশে আসার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার (২৪ আগস্ট) রাতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপচারিতায় এ মন্তব্য করেছেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর আইনের চাপ আছে। আমরা এখনও আশাবাদী মিয়ানমার তাদের দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে। এজন্য আমরা আশাবাদী যে ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের তিনটি চুক্তি সই হয়েছে। মিয়ানমার আমাদের বন্ধু দেশ, তারা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে তাদের লোকদের নিয়ে যাবে। আমরাও তাদের কথা বিশ্বাস করেছি। তবে আমরা তাদের বলেছি তোমরা যে তোমাদের দেশে তোমাদের লোকদের নিয়ে যাবে তাদের কীভাবে নিরাপত্তা দেবে। তারা যাতে নিরাপদে থাকে সেই পরিবেশ তোমাদের আগে করতে হবে। যাতে তারা ভয় না পেয়ে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যায়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে মিয়ানমার আমাদের কথায় রাজি হলেও তারা তাদের দেশের নাগরিকদের নিতে পারছে না। কারণ, তাদের দেশে যুদ্ধ চলছে। আরও বহু লোক বাধ্য হয়ে রাখাইন ছেড়ে পালাচ্ছে। আমরা আশাবাদী ৭৮ সাল ও ৯২ সালে বহু রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসে। পরে আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে তাদের ফেরত পাঠাই। এবারও পারবো।’
সারা পৃথিবী বাংলাদেশের পাশে আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। যেসব দেশ রেজুলেশনে যায় নাই সেসব দেশও বলছে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত যাওয়া উচিত।’
ভারতকেও পাশে পেয়েছেন এমন দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এমনকি আমাদের বন্ধুদেশ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে চিঠি লিখে বলেছেন রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে যাওয়া উচিত। বলা যায়, এটা আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। যুদ্ধ ছাড়া আমরা সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। মিয়ানমারের সাথে এসব বিষয়ে আমাদের নিয়মিত আলাপ অব্যাহত আছে।’
তাদের (মিয়ানমার) দেশের নাগরিককে ফেরত পাঠানোর জন্য এই করোনাভাইরাসের সময়েও আমরা কাজ করেছি জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, এই করোনাভাইরাসের সময় আমাদের দেশ থেকে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গার নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছি। তারা এগুলো যাচাই-বাছাই করার পর ৩০ হাজার লোকের নাম-ঠিকানা সম্বলিত তালিকা আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। কাজ চলছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় আমাদের নিয়মিত বৈঠক না হলেও আমাদের কাজ চলছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা করে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ। রোহিঙ্গাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারটি নিয়ে আমরা সমস্যায় আছি। এই সমস্যা দূর করার জন্য আমরা মিয়ানমার-চীন-বাংলাদেশ মিলে কাজ করে যাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টের মাঝামাঝি রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করতে রাখাইনে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী একের পর এক অপরাধ ঘটাতে থাকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং তাদের সমর্থনে বিভিন্ন বৌদ্ধ সম্প্রদায়। ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস এই জাতিগত সহিংসতায় প্রাণ হারাতে থাকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া, শিশু হত্যা, সম্পদ কেড়ে নেওয়াসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের মুখোমুখি হয়ে প্রাণ বাঁচাতে ২৫ আগস্ট থেকে সোয়া সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে আসে আশ্রয়ের সন্ধানে।
বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিলেও এর আগে থেকেই কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছিল প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এরপর থেকেই বিশ্ব সম্প্রদায়কে পাশে নিয়ে এসব রোহিঙ্গাকে নিরাপদে তাদের দেশে ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। রাখাইনে সংঘটিত এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বলছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলছে এ মামলার বিচার।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি