অদৃশ্য করোনা, বিপন্ন মানুষ ও আগামী বিশ্ব

ভ;
  • প্রকাশিত: ৮ জুলাই ২০২০, ৬:০৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর মানুষ আজ অদৃশ্য ‘করোনা ভাইরাস’ কোভিড-১৯ এ বিপর্যস্থ। ফলে মানুষ আজ জলে-স্থলে অন্তরীণ। এ সুযোগে প্রকৃতি তার ডানা প্রসারিত করে নিত্যদিন নৃত্য প্রদর্শন করে চলেছে। সবুজ পৃথিবীর বৃক্ষ শাখা গুলো যেন, তাদের পুষ্প-পল্লবের অবারিত সৌন্দর্য আপন খেয়ালে মেলে ধরছে!

বনের প্রাণীদের ভীতিহীন আচরণ-বিচরণে বুঝা যায় তারা নুতন জীবনের সন্ধান পেয়েছে। সমুদ্রের জলজ প্রাণীরা উপকূলে এসে জলকেলি খেলছে। সমুদ্র তটের লাল কাকঁড়ার ঝাঁক যেন তাদের অধিকার খুঁজে পেয়েছে আপন ভুবনে। গাছে গাছে পাখিদের কল-কাকলি, সীমাহীন নীল আকাশে ডানা মেলে তারা বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছে। শুধু মানুষ আজ অবরুদ্ধ। এ যেন এক অন্য রকম পৃথিবী। মানুষের জন্য এ এক কঠিন ও নির্মম পৃথিবী।

বিশ্ব সভ্যতার সোনালী যুগের যে মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন করে, গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে তাদের অভিযাত্রা অব্যাহত রেখেছে, যে মানুষ তাদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য বিশ্বকে কমপক্ষে দশবার ধ্বংস করা যায় এমন পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ গড়ে তুলেছে, ভাবতে অবাক লাগে সে মানব সমাজ আজ অবরুদ্ধ।

যে মানুষের তৈরি সুপারসনিক যুদ্ধ বিমানগুলো সেকেন্ডে হাজার হাজার মাইল উড়ে গিয়ে শত্রু শিবিরে নির্ভুল নিশানায় আঘাত আনতে পারে, ধ্বংস করতে পারে, জলে, স্থলে, আকাশে স্থাপিত যে কোন স্থাপনা! সে মানুষ আজ অবরুদ্ধবাসী!

সেই বুদ্ধিদীপ্ত জগতের মানুষকে আজ বড়ই অসহায় মনে হচ্ছে। একটি অদৃশ্য করোনা ভাইরাস মানুষকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ভাইরাসটি মানুষকে সামান্যই তোয়াক্কা করছে।

‘ভাইরাসটি’ দেশে দেশে মৃত্যুর বিভীষিকাময় ফাঁদ পেতে লাশের মিছিলে প্রতিদিন যুক্ত করছে হাজার হাজার মানুষকে। মৃত্যুর লাগামহীন ঘোড়ায় চেপে মানুষকে শুধু মানুষকে ধরতে বিশ্বময় দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ‘কোভিড-১৯’ ভাইরাস। ঘরে আর বাইরে মানুষের যাওয়া-আসার শঙ্কিত খেলা দেখে ভাইরাসটি যেন মুচকি হাঁসছে।

শুধু কি তাই! মানুষের সভ্যতা, মানবিকতা, মানুষের প্রতি মানুষের সহযোগিতা, সহমর্মিতা বোধকে আজ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাসটি।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, ছেলে মাকে কোভিট ভেবে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে, স্বামী তার স্ত্রীকে জঙ্গলে, বাস থেকে জনতা যাত্রীকে নামিয়ে দিচ্ছে, ফ্রন্ট লাইনার চিকিৎসা সেবিদেরকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। কোভিড ভেবে শনাক্ত না করেই লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর কি কি ঘটলে কিয়ামত বলা যায় আর!

মনে হচ্ছে সমস্ত মানব জাতি যেন, আজ প্রকৃতির নিকট অস্পৃশ্য! প্রকৃতি যেন তার প্রতি আমাদের করা নিষ্ঠুর আচরণের শোধ নিচ্ছে। দয়াময় অত্যন্ত করুণা করে তাঁর ভূ-মণ্ডল ও নব-মণ্ডলের লক্ষ কোটি গ্রহ, নক্ষত্রের মধ্যে একমাত্র পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তৈরি করেছেন। অথচ আমরা এ সুন্দর পৃথিবীর উপর জলদূষণ, বায়ুদূষণ, বনভূমি উজাড় কার্বনডাই নির্গমণ, পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোসহ নানা ভাবে প্রকৃতির উপর নির্দয়, নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছি। কে জানে ‘করোনা ভাইরাস’ এসবের প্রতিশোধ কি না! অতীতে কলেরা, বসন্ত, প্লেগ, ইবোলা, এইডস এসব মহামারি কেন হয়েছিল? কোভিড আক্রান্ত আজকের বিপন্ন মানব জাতির তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।

যে প্রকৃতি মানব জাতিকে তার সব কিছু উজাড় করে দিয়ে বুকে আগলে রাখে, সে প্রকৃতির সাথে মানুষের আচরণ কেমন হবে তার উপর নির্ভর করবে, আগামী বিশ্বে মানব প্রজন্মের ভবিষ্যৎ। আমরা আমাদের এ সুন্দর বসুন্ধরার প্রতি যত্নবান না হলে আমাদেরকে কোভিড-১৯ এর চেয়েও ভবিষ্যতে আরো ভয়ঙ্কর পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে নিশ্চয়। কারণ প্রকৃতিকে আমরা যা দেবো, প্রকৃতি তা ফিরিয়ে দিতে কুন্ঠাবোধ করবে না।

পরিশেষে বলবো, নিশ্চয় আমরা এমনটি চাই না। তাই কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ব সমাজ ও তার নেতৃবৃন্দকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস নিয়ে এ পৃথিবীকে মানুষের জন্য বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

আসুন, সকলেই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলি, ঘরে থাকি, নিজে বাঁচি, পরিবার, সমাজ, দেশ সর্বোপরি মানবতাকে বাঁচাই।

প্রভাষক

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সরকারি কলেজ

ইটনা, কিশোরগঞ্জ।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি