অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ‘রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা’ তৈরিতে সক্ষম

সিলেটডায়রি আন্তর্জাতিক ডেস্ক ;
  • প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০২০, ৪:১২ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৫ বছর আগে

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিনটি মানব শরীরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ভ্যাকসিনটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের পর এটি মানব শরীরের জন্য নিরাপদ বলেও প্রমাণিত হয়েছে। এই ফলকে ‘অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক’ বলে অভিহিত করলেও ভ্যাকসিনটি করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট কি না, সেটি নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা জানিয়েছেন, ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর এই ভাইরাসটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের ধাপটির পথে এগিয়ে গেছেন তারা। ওই ধাপে সফল হলে ভ্যাকসিনটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের পথে চূড়ান্ত পা ফেলবে। তবে মানবশরীরে প্রথম ধাপে ট্রায়ালের পরই ভ্যাকসিনটির ১০ কোটি ডোজের অর্ডার দিয়ে রেখেছে যুক্তরাজ্য সরকার।

বিবিসির খবরে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে অক্সফের্ডের এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এক হাজার ৭৭ জনের শরীরে এই ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়েছিল। ভ্যাকসিনটি তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি ও টি-সেল তৈরি করেছে, যেগুলো করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।

এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে জেনেটিক প্রকৌশলের মাধ্যমে পরিবর্তিত একটি ভাইরাস থেকে। এই ভাইরাস শিম্পাঞ্জিদের সাধারণ ঠান্ডার (কমন কোল্ড) কারণ হিসেবে কাজ করে থাকে। ‘ChAdOx1 nCoV-19’ শিরোনামের এই ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ওই ভাইরাসটিকে এমনভাবে বদলে দেওয়া হয়েছে যে এটি দেখতে করোনাভাইরাসের মতো হলেও তা মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে না। আর ভাইরাসটিকে করোনাভাইরাসের মতো দেখতে করে তুলতে করোনাভাইরাসের ‘স্পাইক প্রোটিনে’র জেনেটিক ইনস্ট্রাকশন ব্যবহার করা হয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমেই মূলত করোনাভাইরাস মানবশরীরের বিভিন্ন কোষকে আক্রমণ করে থাকে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি করোনাভাইরাসের মতো করে তৈরি করা হয়েছে যেন ‘ইমিউন সিস্টেম’ এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে মানবশরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার উপযোগী অ্যান্টিবডি ও টি-সেল তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিন প্রয়োগের ১৪ দিন পর টি-সেল সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায় এবং ২৮ দিন পর সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায় অ্যান্টিবডি। তবে এই অ্যান্টিবডি ও টি-সেল ঠিক কতদিন পর্যন্ত শরীরে কার্যকর থাকে, সেটি নিশ্চিত হওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় ধরে এই গবেষণা পরিচালিত হয়নি।

অক্সফোর্ড রিসার্চ গ্রুপের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, আজ যে ফল প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আমরা সত্যিই সন্তুষ্ট। আমরা অ্যান্টিবডি ও টি-সেল দু’টির উপস্থিতিই পেয়েছি। এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক এবং আমাদের বিশ্বাস, এ থেকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষাও মিলবে।

তবে ভ্যাকসিনটি কার্যকর কি না— সময়ের সবচেয়ে বড় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় আসেনি বলে মন্তব্য অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ডের। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেই এখন যে প্রশ্নটির উত্তর জানতে চান, সেটি হলো— ভ্যাকসিনটি কাজ করবে কি? এটি সুরক্ষা দেবে কি? আমি বলব, এই উত্তর পেতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।’

গবেষণায় উঠে এসেছে, ভ্যাকসিনটির প্রথম ডোজ দেওয়ার পরই ৯০ শতাংশ ব্যক্তির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। বাকি ১০ ভাগ ব্যক্তির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয়েছে। অধ্যাপক পোলার্ড বলছেন, আমরা আসলে জানি না যে সুরক্ষার জন্য কী পরিমাণ অ্যান্টিবডির মাত্রা প্রয়োজন। তবে দ্বিতীয় ডোজের জন্য আমরা এর সাড়ার হারকে বাড়িয়ে দিতে পারি।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি